অস্ত্র সমর্পণে রাজি হামাস, শান্তির পথে অগ্রগতি


অস্ত্র সমর্পণে রাজি হামাস, শান্তির পথে অগ্রগতি

গাজা উপত্যকায় চলা সংঘাত বন্ধে দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে কাজ করছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, গোষ্ঠীটি সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির শর্তে সম্মতি দিয়েছে। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক উত্থাপিত ২০ দফা চুক্তির প্রস্তাবনার মূল শর্ত ছিল হামাসের অস্ত্র সমর্পণ।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়া রোববার (৫ অক্টোবর) একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে হামাস আন্তর্জাতিক তদারকিতে ফিলিস্তিনি ও মিসরীয় প্রশাসনের কাছে তাদের অস্ত্র জমা দিতে সম্মত হয়েছে। তবে এই তথ্যের সত্যতা অন্য কোনো সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি।

এদিকে, আল-আরাবিয়াকে দেওয়া বক্তব্যে হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, "হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ গাজার বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো করা শুরু করেছেন।" এই প্রক্রিয়াটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ইসরায়েলের প্রতি বিমান হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে হামাস।

ইসরায়েলের কাছে এসব মরদেহ হস্তান্তরে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানা গেছে, এবং যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে নমনীয়তা দেখানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। আল-আরাবিয়ার প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসরায়েল যাতে পুনরায় যুদ্ধ শুরু না করে এবং তাদের সৈন্যরা গাজা উপত্যকা ছেড়ে চলে যায়, সেই নিশ্চয়তা যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে দিয়েছে।

এর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, হামাসের সামরিক শাখার প্রধান ইজ আল-দিন আল-হাদাদ বলেছেন যে তারা রকেটের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র ত্যাগ করতে রাজি। তবে, রাইফেলের মতো রক্ষণাত্মক অস্ত্র হামাস যোদ্ধারা নিজেদের কাছে রাখতে চায়। যেহেতু ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব রয়েছে, তাই রক্ষণাত্মক অস্ত্র রাখা তাদের অধিকার বলে মনে করে হামাস।

অন্যদিকে, হামাসের পক্ষ থেকে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি এবং গত জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েলি সেনারা যেখানে ছিল সেখানে তাদের ফিরে যাওয়া। এর অর্থ ইসরায়েলি সৈন্যদের অবশ্যই গাজার জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সরে যেতে হবে। শর্তাবলিতে আরও বলা হয়েছে যে, আলোচনা চলাকালীন প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার জন্য গাজায় ইসরায়েলের বিমান ও ড্রোন উড়ানো বন্ধ রাখতে হবে, এবং যেদিন জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, সেদিন এই নিষেধাজ্ঞা ১২ ঘণ্টা কার্যকর থাকবে।

একটি সূত্রের ভাষ্যমতে, এই শর্তগুলো আলোচনার পুরো সময়কাল ধরে মেনে চলতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে এই আলোচনা কয়েক দিন বা এমনকি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে।

ফিলিস্তিনি একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় হামাস স্পষ্ট করেছে যে জিম্মিদের খুঁজে বের করার জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই তাদের শর্তগুলো মানতে হবে। ইসরায়েলকে তাদের বিমান ও গোয়েন্দা ড্রোন উড়ানো বন্ধ রাখতে হবে এবং গাজা সিটি থেকে সরে যেতে হবে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে যে, যদি ইসরায়েল হামলা ও উড়োজাহাজ উড়ানো বন্ধ রাখে, তাহলে হামাসও পাল্টা হামলা বন্ধ রাখবে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির সময় দখলদার ইসরায়েল ফাতাহ ও হামাসের প্রায় ৫০ জন শীর্ষ নেতাকে মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছিল। মুক্তি না পাওয়া এই নেতাদের মধ্যে রয়েছেন মারওয়ান বারঘোটি, আহমেদ সাদাত, ইব্রাহিম হামেদ, হাসান সালেমেহ, এবং আব্বাস সায়েদ।

হামাস জোর দিয়ে বলেছে যে এবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অবশ্যই এই নেতাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে, কারণ তাদের মুক্ত করার জন্য হামাসের কাছে এটিই শেষ সুযোগ।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×