ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখা ঠিক নয়: ড. ফাহমিদা খাতুন


ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখা ঠিক নয়: ড. ফাহমিদা খাতুন

দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়ের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সদস্য ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, লাওভাবে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখা ঠিক নয়। কোনো বড় ধরনের বিচ্যুতি না থাকলে জব্দকৃত হিসাবগুলো খুলে দেওয়া যায়। তা না হলে সার্বিক ব্যবসা বাণিজ্য, দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের ওপর বিরাট প্রভাব পড়বে।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওয়ের এফডিসিতে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলায় ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে এই মন্তব্য করেন ড. ফাহমিদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ড. ফাহমিদা বলেন, গত এক বছরে অর্থনীতির কিছু সূচকের পতন ঠেকানো গেলেও সংকট কাটেনি, দারিদ্র্য কমছে না। ব্যাংকিং খাতে বিগত সরকারের সময় সুশাসন ছিল না। প্রতিটি সূচকেই পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। অর্থনীতির আকারের চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক বেশি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যা পৃথিবীর কোথাও নেই। বিগত সময়ে নিজেদের সম্পদ বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যাংকগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বল ব্যাংকসমূহকে একীভূত করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যা জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এই বিষয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি ও রাজনীতি পাশাপাশি চলে, একে অপরের পরিপূরক। দুর্বল শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতি সচল রাখা যায় না। সঠিক রাজনীতি ছাড়া সঠিক অর্থনীতি সম্ভব নয়। স্বল্পমেয়াদী সরকার দীর্ঘায়িত হওয়া অর্থনীতির জন্য শুভ নয়। এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হয়। তাই আর্থিক খাতের শৃঙ্খলার জন্য দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে কিছু বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিক খাতের মাফিয়াদের সুবিধা দিয়েছিল। তখন দেশে মাফিয়া ইকোনমির শাসন ছিল। ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ভালো ব্যাংক লুণ্ঠিত হয়েছে। ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা শুধু আত্মসাতই করা হয়নি, বিদেশেও পাচার হয়েছে। এর ফলে গ্রাহকেরা উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকেই চিকিৎসার খরচ মেটানোর জন্যও ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর মালিকরা শুধু অর্থ আত্মসাত করেনি, ব্যাংকের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদও লুট করেছে। বর্তমানে ৬-৭ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ঋণ নিয়ে মর্টগেজকৃত সম্পত্তিগুলো ঝামেলাপূর্ণ হওয়ায় নিলামে বিক্রি করা যায়নি। প্রভাবশালীদের কারণে কেউ এগুলো কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে শীর্ষক ছায়া সংসদে ঢাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিতার্কিকরা সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট আবুল বশির খান, সাংবাদিক মো. আলমগীর হোসেন ও সাংবাদিক রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×