অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়বে: ড. ফাহমিদা খাতুন


অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়বে: ড. ফাহমিদা খাতুন

অর্থনীতির জন্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য উল্লেখ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে, ততই দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব বাড়বে।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক একীভূতকরণ’ বিষয়ক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি ও অর্থনীতি পাশাপাশি চলে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়বে।”

ড. ফাহমিদা আরও জানান, ব্যাংক একীভূতকরণ একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই বছর সময় নেবে; তবে বাস্তবে এটি তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে ব্যাংকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। ব্যাংকের লাইসেন্স জনগণের কল্যাণের জন্য নয়, বরং ব্যক্তিস্বার্থে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে লুটপাটে সহযোগিতা করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকখাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে একীভূতকরণ এর দিকে হাঁটছে। যদিও দেশে এর আগে একীভূতকরণের ভালো কোনো উদাহরণ নেই।”

তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার পরিকল্পনা করেছে, যা একীভূত হলে দেশের মোট ব্যাংক খাতের ৮.৪ শতাংশ সম্পদ নিয়ে কাজ করবে। অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে খরচ কমানোর লক্ষ্য রয়েছে। তিনি সতর্ক করেছেন, “তবে এ উদ্যোগ ব্যর্থ হলে দায়ভার বর্তমান কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। আর সফল হলে ব্যাংক খাত আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।”

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাকে অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে ড. ফাহমিদা বলেন, “সফলতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন আইন প্রণয়ন দরকার এবং যারা আইন বাস্তবায়ন করবেন তাদের সততাও নিশ্চিত করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনেক ভুল ছিল। যথেষ্ট আইনি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে সঠিকভাবে কাজ করতে দেয়নি। চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ রাজনৈতিক প্রভাব মেনে নিয়েছে, আবার কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে সুবিধা নিয়েছে। আর্থিক খাতের মাফিয়াদের অনৈতিক সুবিধা প্রদানে ব্যাংক কার্যত সহায়ক হয়েছে। তখন দেশে মাফিয়া ইকোনমি শাসন করছিল। আশা করি এখন তার অবসান হচ্ছে।”

তিনি আরো জানান, “চোখের সামনে সবচেয়ে ভালো ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক লুণ্ঠিত হয়েছে। চোর-ডাকাতরা বৈদেশিক মুদ্রায় এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যে কয়টি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো এখন অতি দুর্বল অবস্থায় আছে। মালিকদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল অর্থ আত্মসাৎ করা ও বিদেশে পাচার করা।”

শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্থিতিশীল সরকারের প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যে সরকার অতীতের অনিয়ম থেকে শিক্ষা নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। যত দ্রুত সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। ফেব্রুয়ারিতে যদি একটি ভালো নির্বাচন হয়, তাহলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরবে, বিনিয়োগ বাড়বে এবং আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরে আসবে।”

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি সরকারি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছে, আর সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ বিরোধী দলের হয়ে অংশগ্রহণ করে। ফলাফল হিসেবে বিরোধী দল বিজয় লাভ করেছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×