বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুলের অশ্লীল ভিডিও ফাঁস, তদন্ত কমিটির মেয়াদ বেড়েছে চার দিন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:৫০ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২৫

আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামের ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় চার দিন বাড়ানো হয়েছে। আজ রোববার কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন থাকলেও তা দিতে না পারায় সময় বাড়ানো হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
শাহীনুল ইসলামের অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২০ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদ কুতুবকে। যুগ্মসচিব মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামকে সদস্যসচিব এবং অন্য দুই সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (তথ্যপ্রযুক্তি) মো. মতিউর রহমান।
চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি শাহীনুল ইসলাম বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। তবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার আচরণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে থাকে। বিশেষ করে অফিস কক্ষের ভিতরে ভিডিও কলে নারীদের যৌনাঙ্গ প্রদর্শনের একটি ভিডিও ঢাকাওয়াচের কাছে আসে, এর ফলে তার ব্যক্তিগত ও পেশাদারিত্ব উভয়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। ভিডিওটি প্রচারের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটি ব্যাপক ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি অফিসে বসে ভিডিও কলে নারীদের যৌনাঙ্গ দেখাচ্ছেন। শুধু অফিসেই নয়, অফিসের বাইরেও তার বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ও যৌন কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সংবাদমাধ্যমকে জানান, “শাহীনুলের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএফআইইউ প্রধান ছুটিতে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে ২০ আগস্ট শাহীনুল ইসলাম গভর্নরের আদেশ অমান্য করে অফিসে উপস্থিত হন। এ ঘটনায় ব্যাংকের ভেতরে উত্তেজনা তৈরি হয়। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গভর্নরের নির্দেশ অমান্য করে তিনি অফিস করছেন।
এই বিষয়ে শাহীনুল ইসলাম বলেন, “কিসের বাধ্যতামূলক ছুটি, আমি তো অফিস করছি। আমি তো গভর্নরের অধীনে চাকরি করি না। তিনি বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে? তার কোনো অধিকার নেই। আমার অফিস বাংলাদেশ ব্যাংকে হওয়ায় এখানে আসি, এখন গভর্নরের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছি। আর যারা আন্দোলন করছেন বা হুমকি দিচ্ছেন, তা বৃথা।”
তবে শেষ পর্যন্ত তার এই বক্তব্য কার্যকর হয়নি এবং বর্তমানে তিনি বাধ্যতামূলক ছুটিতেই রয়েছেন।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা গভর্নরের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে শাহীনুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। স্মারকলিপিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশিত হওয়ায় ব্যাংকসহ গোটা আর্থিক খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
একই ইস্যুতে শাহীনুল ইসলামের ব্যাপারে গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর এবং দু’জন নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে সহায়তা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অন্য বিভাগের কর্মকর্তারা। শাহীনুল ইসলাম এটিকে ভুয়া দাবি করলেও প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ভিডিও সঠিক বলে জানতে পেরেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া, শাহীনুল ইসলামের দেওয়া আর্থিক অনুমোদনও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে বিএফআইইউ এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের ৫০টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছিল, যেখানে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শাহীনুল একই পরিবারের চারটি হিসাব পুনরায় ফ্রিজ না করে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেন। অভিযোগ রয়েছে, কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।