কার্গো ভিলেজের আগুনে এক বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির দায় কেউ এড়াতে পারে না: ইএবি সভাপতি
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:৫৯ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৫

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেশের রপ্তানি খাতে এক বিশাল ধাক্কা দিয়েছে বলে জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। সংস্থার প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, আগুনে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইএবি সভাপতি এবং বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ড শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। নিরাপত্তাজনিত অব্যবস্থাপনার দায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি), কাস্টম হাউস এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস; কেউই এড়াতে পারে না।’
তিনি স্পষ্ট করেন, কার্গো ভিলেজের মালিকানা সিএএবি’র হলেও, কাস্টম হাউসের তত্ত্বাবধান এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের হ্যান্ডলিং দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ। তার ভাষায়, এই ব্যর্থতাই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার মূল কারণ।
কার্গো ভিলেজে দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখার সংস্কৃতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং চুরির মতো ঘটনায় অতিষ্ঠ রপ্তানিকারকেরা বহুদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এটি শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অটো ফায়ার ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম না থাকা, ফায়ার সার্ভিসের বিলম্বে পৌঁছানো এবং আগুনের দ্রুত বিস্তার; সবই প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রমাণ।’
এ বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ড কি কেবলই দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত? দায় কার, তা জনগণ জানতে চায়। সরকারকে অবিলম্বে স্বচ্ছ তদন্ত শুরু করতে হবে।’
সম্প্রতি আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও শিল্পখাতে চরম উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে বলে মত দেন তিনি। ‘এই ধারাবাহিকতা উদ্বেগজনক এবং আমাদের রফতানিকারকদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলছে,’ বলেন তিনি।
ইএবির তথ্য অনুযায়ী, কার্গো ভিলেজ রপ্তানির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, ফলমূল, ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ পচনশীল পণ্য রপ্তানিকারকরা এই স্থাপনাকে ব্যবহার করে থাকেন।
অগ্নিকাণ্ডে পোশাক শিল্প, ওষুধ এবং কৃষিপণ্যের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অংশটি পুড়ে যাওয়ায় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে কাঁচামাল সংরক্ষণের বড় সংকট দেখা দিয়েছে।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এই ঘটনায় রফতানি আদেশ বিলম্বিত হওয়ায় ক্রেতাদের আস্থা কমবে, বাজার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি নিম্নলিখিত পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানায় -
১. অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিমা দাবির দ্রুত নিষ্পত্তি।
২. যেসব পণ্যের বীমা ছিল না, তাদের ক্ষতিপূরণে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন।
৩. কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ নিশ্চিত করা।
৪. ওষুধ শিল্পের জন্য আলাদা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম স্থাপন।
৫. নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ।
৬. গুদাম ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও প্রযুক্তিনির্ভর করা।
তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান
ইএবি মনে করে, সরকার ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিশন গঠন জরুরি। এই কমিশন কেবল দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন করবে না, বরং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিজিএপিএমইএ, লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস, ফ্রোজেন ফুড, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক, জুয়েলারি, হস্তশিল্প, ফলমূল ও শাকসবজি রফতানিকারক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদ হাতেম শেষে বলেন, ‘আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দায়ীদের চিহ্নিত করা হোক। আমাদের রফতানি খাতের সুনাম ও ভবিষ্যৎ বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’