দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরেছে, তবে বৈষম্য বেড়েছে: ড. জাহিদ হোসেন
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:৫৯ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৫

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরেছে এবং কর্মসংস্থান বেড়েছে। তবে, পারিবারিক পর্যায়ে দারিদ্র্য এবং বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
শনিবার (৩০ আগস্ট) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার প্রধান কারণ হলো, অস্থিতিশীলতার পেছনে থাকা ব্যক্তিরা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। অর্থপাচার বন্ধ হয়েছে, হুন্ডির প্রবাহ কমেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে। ব্যাংক লুটপাট বন্ধ হলেও প্রকৃত চিত্র উন্নত হয়নি, বরং খেলাপি ঋণ বেড়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিবেশও বাংলাদেশের পক্ষে গেছে। বিশেষত, ডলারের দরপতন ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।" তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, "এই স্থিতিশীলতার পেছনে নীতির অবদান সীমিত। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে, নীতিতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরেছে, তবে সরকারের সব সিদ্ধান্ত সঠিক হচ্ছে এমনটা বলা যাবে না।"
ড. জাহিদ জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, "ভারত ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ অতিরিক্ত ২০৫ কোটি ডলার রফতানির সুযোগ পাবে। এর মধ্যে ভারতের তুলনায় ১২০ থেকে ২০৭ কোটি ডলার এবং চীনের তুলনায় সাত থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত রফতানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।"
তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, "বাংলাদেশ বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে আটকে আছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, দুর্বল ব্যাংক খাত, অদক্ষ লজিস্টিক ব্যবস্থা, শ্রমবাজারের উন্নয়ন না হওয়া এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় এই অবস্থার মূল কারণ।"
সংস্কারের প্রসঙ্গে ড. জাহিদ বলেন, “রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেই সংস্কার সফল হয় না। এর জন্য প্রয়োজন ‘রিফর্ম ডেলিভারি ক্যাপাসিটি’। উপদেষ্টা পরিষদ, প্রশাসন, ব্যবসায়ী সমাজ ও নাগরিক গোষ্ঠী, এই চারটি পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সংস্কার টেকসই হবে না।”
বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, “কিছু ক্ষেত্রে তারা আন্তরিক, কিছু ক্ষেত্রে সাহসী, আবার কিছু ক্ষেত্রে দিশেহারা।”
ইরএফ’র অনুষ্ঠানে ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বলেন, "জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা বাস্তবে আসেনি; বরং বৈষম্য আরও বেড়েছে।"