বাজারে সবজির সঙ্গে ডিম-মাছ-চালের দামেও আগুন


বাজারে সবজির সঙ্গে ডিম-মাছ-চালের দামেও আগুন

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। শুধু সবজি নয়, ডিম, মাছ, মাংস ও চালের দামও একযোগে বেড়েছে। রাজধানীর জোয়ার সাহারা ও খিলগাঁও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। ডিমের দামও ডজনে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি স্থির ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আরেকটি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষি উৎপাদন কমেছে, পাশাপাশি পরিবহন খরচ বেড়েছে—যার ফলে পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারেই পণ্যের দাম বেড়েছে।

খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “সবজির সরবরাহ কমে গেছে। চারদিকে পানি, অনেক জায়গায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আড়তেই যখন বেশি দামে কিনতে হয়, তখন খুচড়ায়ও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। লাভ তো করতে হবে নাহলে ব্যবসা টিকবে কেমন করে?”

বাজারে এখন শিম ৮০–১০০, কচুর লতি ৮০, বরবটি ১০০, ঝিঙা ৮০, পটল ৯০, ধুন্দুল ৮০, টমেটো ১৮০, কুমড়া ৬০, মুলা ৮০, করোলা ১০০, ঢেঁড়স ৯০, শসা ১০০, বেগুন ২০০, কাঁচা মরিচ ২৮০ ও গাজর ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এসবের দাম ছিল তুলনামূলক কম—শিম ৬০–৭০, কচুর লতি ৫০–৬০, বেগুন ১২০–১৫০, মরিচ ২০০ টাকার নিচে ছিল।

এক নারী ক্রেতা বলেন, “আগে বাজারে গেলে ৫০০ টাকায় ২ দিনের সবজি হয়ে যেত। এখন ৫০০ টাকায় একদিনেরও সবজি হয় না। দাম শুধু বাড়ে, কিন্তু আমাদের বেতনে কোনো পরিবর্তন আসে না।”

ডিমের দামও হঠাৎ বেড়েছে—সাদা ডিম ১৪০ টাকা, বাদামি ১৫০ টাকা ডজনে। ১০ দিন আগেও দাম ছিল ১২০–১৩০ টাকা।

ডিম বিক্রেতা আশরাফুল বলেন, “সবজি ও মাছের দাম বেশি হলেই মানুষ ডিম বেশি কিনে। এই চাহিদা একবারে বেড়ে গেলে আমরাও বেশি দামে কিনি, তাই বেশি দামে বিক্রি করি। সরবরাহ যদি সব সময় একই থাকত, দাম এমনভাবে উঠানামা করত না।”

মাংসের ক্ষেত্রেও চিত্র একই—গরুর মাংস ৭৪০, খাসির ১১০০, দেশি মুরগি ৬০০–৬২০, ব্রয়লার ১৭০–১৮০, সোনালি মুরগি ৩২০–৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পরিবহন ব্যয়, পশুখাদ্যের দাম ও মৌসুমি চাহিদা বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা।

মাছের বাজারেও বড় ধাক্কা লেগেছে। বড় ইলিশ ২৪০০–২৫০০, ছোট ইলিশ ১৫০০–১৮০০, বড় রূপচাঁদা ১৬০০, ছোট ১০০০, রুই ৩৫০–৪০০, কাতলা ৭০০–৮০০, পাঙ্গাস ৬০০, বোয়াল ৯০০, তেলাপিয়া ৪০০–৪৫০, শিং মাছ ৫০০–৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দীর্ঘদিনের বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ বলেন, “বৃষ্টিতে নদী-খালে মাছ ধরা কমেছে, উৎপাদনও কমে গেছে। আড়তে গিয়ে বেশি দামে কিনতে হয়, আবার গাড়ি ভাড়া দিয়েও আনতে হয়। তার ওপর কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে লাভের জন্য দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।”

চালের দাম গত দেড় মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী—মোটা চাল ৬০ টাকার ওপরে, মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৬৫–৭০, অন্যান্য চাল ৭৫–৮৫ এবং ব্র্যান্ডের ভালো চাল ৯০–১০০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীদের মতে, মিলগেটে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবহন ব্যয়ও যুক্ত হয়েছে।

খিলগাঁওয়ের একজন ক্রেতা বলেন, “সব কিছুর দাম বাড়ে, কিন্তু আয় বাড়ে না। বাজারে এক হাজার টাকা নিয়ে এলেও ভালো করে কিছু কেনা যায় না। একদিনের জন্য যা কিনে আনি, সেটা আগে তিনদিন চলত।”

মাছ কিনতে আসা শাহরিয়ার বলেন, “একটু বৃষ্টি হলেই দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। মনে হয়, আবহাওয়ার অজুহাতে অনেকে দাম বাড়ায়। অথচ কোম্পানিতে আমরা বৃষ্টি-রোদে কাজ করলেও বেতন বাড়ে না।”

বিক্রেতারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবহন ব্যয় ও সরবরাহ সংকটকে দায়ী করলেও ক্রেতাদের অভিযোগ, এর আড়ালে অতিরিক্ত লাভের প্রবণতাও আছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, অনেক সময় সমন্বিতভাবে দাম বাড়ানো হয়, যা ভোক্তাদের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করে।

সবজির সঙ্গে ডিম, মাছ, মাংস ও চালের একসঙ্গে দাম বাড়ায় দৈনন্দিন বাজার খরচ ৩০–৪০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেট চাপে পড়ছে, খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×