১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রে বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন


১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রে বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন

ব্যাংকিং এবং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কর নথি জমা দেওয়ার বিধান আরও কঠোর করেছে সরকার। এখন থেকে ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কিংবা ২০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সব তফসিলি ব্যাংককে সম্প্রতি একটি সার্কুলারের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়ে দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করদাতার রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ ছাড়া নির্ধারিত কিছু ব্যাংকিং সেবা আর পাওয়া যাবে না।

নতুন নির্দেশনার আওতায় মোট ২৪টি আর্থিক ও প্রশাসনিক সেবার ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ উদ্যোগ সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক লেনদেনে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে।

এই নিয়ম কার্যকরের আগে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। গেজেটে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আর্থিক সেবাগুলো গ্রহণ করতে হলে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। তা না হলে ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই সেবা প্রদান করবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত ও ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করে হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এ গেজেট খুব শিগগিরই সার্কুলার জারি হবে। তবে ১০ লাখ টাকার বেশি লেনদেনের ক্ষেত্রে রিটার্ন প্রযোজ্য হবে না।”

গেজেট অনুযায়ী, কেউ যদি ১০ লাখ টাকার বেশি অংকের মেয়াদি আমানত চালু করেন বা নতুনভাবে বিনিয়োগ করেন, তাকে সংশ্লিষ্ট বছরের আয়কর রিটার্নের কপি ব্যাংকে জমা দিতে হবে। একই নিয়ম প্রযোজ্য ২০ লাখ টাকার ঋণের ক্ষেত্রেও।

এছাড়া বড় অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কেনা, কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হওয়া, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নবায়ন, ট্রেড লাইসেন্স বা পেশাজীবী লাইসেন্সের হালনাগাদ, জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রেও রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এমনকি ড্রাগ লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, অগ্নিনির্বাপণ ছাড়পত্র, ট্রলার বা নৌযানের সার্ভে সনদ, স্কুলে শিশু ভর্তি, আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স গ্রহণ—সব ক্ষেত্রেই রিটার্ন জমা ছাড়া সেবা মিলবে না।

এই বিধান জারির পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য হলো করজালের পরিধি বাড়ানো এবং আরও বেশি নাগরিককে আয়কর ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা। এতে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সরকার।

গেজেটে আরও উল্লেখ রয়েছে, দ্বৈত কর পরিহার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে দেশের করব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারে।

সরকারের আশা, এই নতুন বাধ্যবাধকতার ফলে কর বিষয়ে সচেতনতা বাড়বে এবং কর প্রদানে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×