যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমিয়ে ২০% করলেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে: বিজিএমইএ সভাপতি


যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমিয়ে ২০% করলেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে: বিজিএমইএ সভাপতি

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে এই হারে ছাড় থাকছে, বিশেষ করে যদি রপ্তানি পণ্যে অন্তত ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তাহলে এই বাড়তি শুল্ক প্রযোজ্য হবে না এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।

শনিবার (২ আগস্ট) ঢাকার উত্তরা এলাকায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পোশাকের প্রায় ৭৫ শতাংশই তুলাভিত্তিক, তাই আমেরিকান তুলা বা অন্যান্য কাঁচামাল ব্যবহারের সুযোগ থাকলে বাড়তি শুল্ক এড়ানো সম্ভব।

তবে এই ছাড়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আত্মতুষ্টিতে ভোগার অবকাশ নেই বলে সতর্ক করেন তিনি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিছু দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যেগুলোর মাধ্যমে সেই দেশগুলোর জন্য শুল্ক আরো কমে যেতে পারে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশকে আলোচনার টেবিলে সক্রিয় থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন মাহমুদ হাসান খান।

তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, গত চার মাস ধরে এই শুল্ক কাঠামো আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় ছিল। তবে বর্তমান যে ২০ শতাংশ হার নির্ধারণ করা হয়েছে তা অনেকটাই ভারসাম্যপূর্ণ। চীন ও ভারতের তুলনায় এটি কিছুটা সহনীয়ও বটে।

মাহমুদ হাসান খান বিশেষভাবে আন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তার ভাষায়, বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট টিমের আন্তরিক নেতৃত্ব না থাকলে হয়তো আমরা আরও বড় বিপদে পড়তাম।

সংকটের শুরুটা ছিল ২ এপ্রিল, যখন যুক্তরাষ্ট্র “লিবারেশন ডে ট্যারিফ” নামে নতুন শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করে। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। একইসঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার ওপরও উচ্চ শুল্ক ধার্য হয়। এই হঠাৎ শুল্কবৃদ্ধি বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারের জন্য এক বড় ধাক্কা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ গ্রহণ করে, যার মধ্যে ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।

প্রাথমিকভাবে ৯ এপ্রিল থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, পরে ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করা হয়। তবে এর মধ্যে ৫ এপ্রিল থেকে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত বেস ট্যারিফ চালু হয়ে যায়। আলোচনা চলাকালীন সময়েও অনিশ্চয়তা ছিল। ২ জুলাই ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার পর উদ্বেগ বাড়ে। পরে ৭ জুলাই বাংলাদেশে তা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলেও ৩১ জুলাই পর্যন্ত পুনরায় আলোচনার সুযোগ মেলে। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ হারে সমঝোতায় পৌঁছায়।

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, আমরা চেষ্টা করেছি আলোচনায় যুক্ত থাকতে এবং সরকারকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করতে। মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গেও আমরা বৈঠক করেছি।

তবে তিনি সতর্ক করেন, ২০ শতাংশ শুল্ক এখন বাধ্যতামূলক, যা পোশাক শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়াবে। ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য এটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সরকারকে এগিয়ে এসে নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।

আমরা আশা করি, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, কাস্টমস নীতিমালা আরও শিল্পবান্ধব হবে, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বাড়বে এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থিতিশীলতা আসবে, বলেন মাহমুদ হাসান খান।

তিনি আরও জানান, বিজিএমইএ ভবিষ্যতেও তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ এবং বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে।

সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, শিল্প মালিক, সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে এই শুল্ক প্রতিবন্ধকতা পরিণত হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনায়।

 

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×