মামলা দিয়ে এফবিসিসিআই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে ফ্যাসিস্টের দোসররা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৩:৩১ পিএম, ০১ আগস্ট ২০২৫
দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের জন্য আগামী ৭ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করে, গত ১৮ জুন ২০২৫ ইং তারিখে তফসিল ঘোষণা করেছিল এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ড। পরবর্তীতে ডিভিসি সহ অডিট রিপোর্ট জমাদানের বাধ্যবাধকতার ফলে অনেক চেম্বার ও এসোসিয়েশনের হালনাগাদ অডিট রিপোর্ট জমা প্রদান সম্ভব হচ্ছিল না। সে প্রেক্ষিতে সকল প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের দাবির ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৪৫ দিন সময় বৃদ্ধি করে।
গত ২ জুলাই ২০২৫ এফবিসিসিআই এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সময়সীমা অনুযায়ী, এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ড নির্বাচন আয়োজনের পুনঃতফসিল শিগগিরই ঘোষণা করবে। কিন্তু একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী, যারা বিগত ১৫ বছর দেশের ব্যবসায়ী সমাজকে কুক্ষিগত রেখে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে এফবিসিসিআই কে নিজেদের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছিল, তারা আবার সক্রিয় হয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য।
প্রথমত সদস্য ফি ২০,০০০ টাকার পরিবর্তে ২,০০০ টাকা নির্ধারণের বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করলে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি যেহেতু সদস্যদের স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট, কিন্তু পরবর্তীকালে পরপর দুই বার নির্বাচিত হওয়ার পর একবার বিরতি রাখার বিধান বাণিজ্য সংগঠন বিধি -২০২৫ এর বিরুদ্ধে রিট, নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড গঠনের জন্য রিট এবং নমিনেটেড প্রথা সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে রিট করে নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা কে বিলম্বিত করছে।
কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সাথে লিয়াজোঁ করে ভোটবিহীন নির্বাচনে বারংবার পরিচালক হয়েছেন কিন্তু ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কিছুই করেননি। আসন্ন নির্বাচনে তাঁরা আবারও প্রার্থী হওয়ার জন্য বাণিজ্য সংগঠন বিধি -২০২৫ এর সংশ্লিষ্ট বিধির বিরুদ্ধে রিট করেছেন। আমরা খুশি হতাম সাধারণ সদস্যদের স্বার্থে ডিভিসি সহ অডিট বাতিল অথবা পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত স্থগিতের জন্য যদি রিট করতেন, কিন্তু তা করেননি। করেছেন নিজেদের স্বার্থে, আবার প্রার্থী হওয়ার জন্য।
নমিনেটেড প্রথা সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে রিট হয়েছে। পূর্বে এসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ১৭ জন ও চেম্বার গ্রুপ থেকে ১৭ জন সর্বমোট ৩৪ জন মনোনীত পরিচালক হতেন এবং নামসর্বস্ব নির্বাচনের আগেই হতেন। কিন্তু বাণিজ্য সংগঠন বিধি -২০২৫ এ চেম্বার গ্রুপ থেকে ৫ জন, এসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৫ জন, উইমেন এসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ১ জন ও উইমেন চেম্বার গ্রুপ থেকে ১ জন সর্বমোট ১২ জন নমিনেটেড পরিচালক হবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নির্বাচনের পরে মনোনীত পরিচালকরা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং এসোসিয়েশন ও চেম্বার নির্ধারিত হবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী ও বৃহৎ চেম্বার এবং এসোসিয়েশনের দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব পর্ষদে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ফেডারেশন ও পর্ষদ সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হবে।
সর্বশেষ নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড বাতিলের রিট তাদের স্বরূপকে উন্মোচিত করেছে। তারা একের পর একটি মামলা দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র মারফত জানতে পেরেছি তারা আরো মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দীর্ঘ ১১ মাস বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এফবিসিসিআই এর সংস্কার হয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হয়েছে এবং দীর্ঘদিন পর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে সাধারণ ভোটাররা ভোট উৎসবের জন্য অপেক্ষা করছে। সর্বোপরি দেশের ব্যবসা খাত কঠিন সময় পার করছে। একদিকে বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও অর্থপাচারের কারণে ব্যাংকিং খাত আজ বিপন্ন। ব্যবসায়ীদেরকে উচ্চ সুদ পরিশোধ করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে, অন্যদিকে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির উপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ ব্যবসায়ীদেরকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ব্যবসায়ী সমাজের সংকটময় ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আজ এফবিসিসিআই এ পর্ষদ না থাকা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিনিধি না থাকায় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে এখন সজাগ হয়ে সকল পর্যায়ে প্রতিরোধ ও নিবৃত্ত করতে হবে এ সকল মামলাবাজদেরকে। প্রয়োজনে পুনঃতফসিল আদায়, অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটাধিকার আদায়ের জন্য মাঠে নামতে প্রস্তুত এফবিসিসিআই এর প্রাণ সাধারণ সদস্যরা।
আলোচিত বিষয়গুলো উঠে এসেছে আতিকুর রহমানের পর্যবেক্ষণে, যিনি বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদ (এফবিসিসিআই )–এর লিয়াজোঁ ও মিডিয়া বিষয়ক কমিটির আহবায়ক হিসেবে নির্বাচন ঘিরে নানা দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তার বর্ণনায় প্রতিফলিত হয়েছে যে, একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটির উপর আধিপত্য বজায় রেখে আসছে এবং চলমান নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে একের পর এক রিট করছে—যা তিনি ব্যবসায়ী সমাজের স্বার্থ ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখছেন।