‘তদন্ত করলে অনেক কিছু স্পষ্ট হবে’ পদত্যাগের পর বললেন মেঘনা ব্যাংকের এমডি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১১:০১ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫
ব্যাংক খাতের অভিজ্ঞ ব্যাংকার কাজী আহ্সান খলিল আকস্মিকভাবে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর তিন মাসের মাথায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ এবং পর্ষদের আচরণকে কেন্দ্র করে এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে তিন বছরের চুক্তিতে মেঘনা ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেন কাজী আহ্সান খলিল। কিন্তু তার মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগেই, চলতি বছরের ২৭ জুলাই রোববার, তিনি পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগপত্রের একটি অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকেও পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা।
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী আহ্সান খলিল বলেন, "নতুন পরিচালনা পর্ষদ আমাকে কোনো পূর্ববর্তী কারণ না জানিয়ে হঠাৎ করে ছুটিতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। আমি সে সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারিনি। তাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিই। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকেও পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি। যেহেতু তারা বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে, তাই তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। আর যদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদন্ত করে, তাহলে আরও অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
জানা গেছে, কাজী আহ্সান খলিল দীর্ঘ ৩৫ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতার অধিকারী। তিনি এর আগে প্রাইম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। মেঘনা ব্যাংকে যোগদানের আগে তিনি এনআরবি ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান ব্যবসায় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মার্চ ২০২৫-এ বাংলাদেশ ব্যাংক মেঘনা ব্যাংকের পুরোনো পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে। নতুন পর্ষদে যুক্ত হন শেয়ারধারী ও স্বতন্ত্র পরিচালকরা, যাঁদের মধ্যে দুজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।
ব্যাংকটির নতুন শেয়ারধারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান উজমা চৌধুরী ও তানভীর আহমেদ। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মামুনুল হক ও রজব আলী, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নজরুল ইসলাম, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত এমডি হাবিবুর রহমান এবং হিসাববিদ আলি আকতার রিজভী। পরবর্তীতে পরিচালনা পর্ষদের সভায় উজমা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। তিনি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে মেঘনা ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এইচএন আশিকুর রহমান। ওই সময় ব্যাংকটির শেয়ার ও পর্ষদে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার ও তাঁদের ঘনিষ্ঠদের হাতে।
এমডির পদত্যাগ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বর্তমান চেয়ারম্যান উজমা চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।