আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা সমন্বিত ব্যর্থতা: এনবিআর চেয়ারম্যান
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৩১ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২৫
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া অর্থাৎ আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাকে একটি সম্মিলিত ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর এফডিসিতে ‘কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কার’ শীর্ষক একটি ছায়া সংসদে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
তিনি বলেন, "আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং-ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা আমাদের সমন্বিত ব্যর্থতা। বর্তমান যুগে পণ্যের দাম পৃথিবীর কোন প্রান্তে কত তা বোতাম টিপলেই জানা যায়। ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংক ও কাস্টমস পরীক্ষা ও যাচাইয়ের মাধ্যমে দাম নিশ্চিত হতে পারে।"
দুর্নীতিকে কর ব্যবস্থার অন্যতম বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, "প্রকৃত মূল্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি না হলে কমপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠান ও প্রকৃত করদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব।"
তিনি আরও বলেন, কর অব্যাহতির চেয়ে কর আদায়ের ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিত। বর্তমানে যেভাবে নির্বিচারে কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে, তা পরিবর্তনের জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার ভাষায়, "সরকার চাইলেই এখন আর অব্যাহতি দিতে পারবে না। শুধুমাত্র সংসদ অর্থবিলের মাধ্যমে কর অব্যাহতি দিতে পারবে।" তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বস্তরে কর বিষয়ক জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করার ওপরও গুরুত্ব দেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এই ছায়া সংসদে বলেন, করনীতি ও কর ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করে গড়ে তোলা হলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব। তবে তিনি সতর্ক করেন যে, এই সংস্কারে প্রশাসন ক্যাডারের প্রভাব বাড়ার আশঙ্কায় রাজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে।
আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, সংস্কারের ফলে পদোন্নতি ও মর্যাদার ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণে কর্মীদের মধ্যে দায়িত্বহীনতা বাড়তে পারে এবং রাজস্ব সংগ্রহে বাধা তৈরি হতে পারে বলেও তারা মনে করছেন।
রাজস্ব আয় বাড়াতে সাত দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সুপারিশগুলোতে রয়েছে:
১। করজাল সম্প্রসারণ ও আদায় প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন
২। প্রস্তাবিত সংস্কার সম্পর্কে সব মহলকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া
৩। রাজস্ব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উন্নয়ন পথ রক্ষায় নজর দেওয়া
৪। কেস বাই কেস কর অব্যাহতির সুযোগ বন্ধ করা
৫। প্রকৃত দামে আমদানি নিশ্চিত করে শুল্ক ফাঁকি রোধ
৬। কর ভীতি দূর করে করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি
৭। করের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা
ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কনকর্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিক দল। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।