অপরাধের দায় ব্যক্তির, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়: চিফ প্রসিকিউটর


অপরাধের দায় ব্যক্তির, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়: চিফ প্রসিকিউটর

অবসান হয়েছে ভয় আর নিপীড়নের যুগের; এমন মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে আইনের চোখে সবাই সমান। কোনো ব্যক্তির পদ, ক্ষমতা কিংবা প্রভাব বিচারকে প্রভাবিত করতে পারে না। অপরাধ করলে জবাবদিহি করতেই হবে।

৮ অক্টোবর, বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে সংঘটিত দুটি গুমের মামলাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমলে নেওয়া প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, অভিযুক্তদের পরিচয় যাই হোক না কেন, দায় তাদের ব্যক্তিগত। রাষ্ট্র, সমাজ বা সংশ্লিষ্ট কোনো বাহিনীকে এর দায়ভার বহন করতে হবে না।

“গুমের দুই মামলায় আমরা যেমন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক আইজিপি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আসামি করেছি, তেমনি বিভিন্ন বাহিনীতে যারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অপরাধ করেছিলেন তাদেরও করা হয়েছে। আজ যারা আসামি শ্রেণিভুক্ত হয়েছেন আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই তারা যে বাহিনীর সদস্যই হন না কেন, সেই বাহিনীগুলো কোনো অবস্থাতেই আসামি নয়। আসামি হচ্ছেন ওই ব্যক্তিরা। এই ব্যক্তিরা আইন অনুসরণ না করে নিজেরা আইন হাতে তুলে নিয়েছিলেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশটাকে একটা বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিলেন। বাংলাদেশটাকে একটা আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছিলেন,” বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, টিএফআই সেল সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড ও নিপীড়নের বিস্তারিত তথ্য তদন্তে উঠে এসেছে। তুলে ধরা হয় কীভাবে মানুষকে আটকে রেখে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হতো। তার ভাষায়, “কি ভাবে মানুষকে আটক রেখে নির্যাতন করা হতো। ইলেকট্রিক চেয়ারে ঘোরানো হতো। যৌনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো। হাত-পা কেটে ফেলা হতো। নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলা হতো। পৈশাচিক নির্যাতন করা হতো। এই যে তাদের তৎপরতাগুলো ছিল একদিন না একদিন প্রত্যেক অপরাধীকেই বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। এটাই হচ্ছে বার্তা।”

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশ এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। স্বৈরশাসনের ভয়াবহ পরিবেশ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভয়ারণ্য থেকে দেশ এখন মুক্তির পথে। এই নবজাগরণের পেছনে রয়েছে অগণিত তরুণের আত্মত্যাগ। চিফ প্রসিকিউটরের মতে, “চব্বিশের ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হয়েছে, স্বৈরশাসন ভয়ের সংস্কৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধের যে আতঙ্কের জনপদ ছিল বাংলাদেশ সেখান থেকে পুনর্জন্ম লাভ করেছে। অসংখ্য তরুণের রক্তের বিনিময়ে এই নতুন অর্জিত যে স্বাধীনতা সেটা তখনই সফল হবে, যারা অপরাধ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আইনসম্মত উপায়ে এসব নিষ্পত্তি করা হবে। সেই উদ্দেশ্যে আজ তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং কোনো বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে আর চলতে দেওয়া হবে না।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×