আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা: পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ৭ অক্টোবর
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৬:৩৫ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আশুলিয়ায় সংঘটিত বর্বর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সপ্তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ৭ অক্টোবর মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত দেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত পৃথক দুটি মামলার শুনানি হয়। এরপর আলোচিত আশুলিয়া লাশ পোড়ানোর মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া ৯ নম্বর সাক্ষী, একাত্তর টিভির স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম অনিককে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত স্টেট ডিফেন্সসহ পলাতক আট আসামির আইনজীবীরা। বিকেল ৫টা পর্যন্ত তার জেরা চলতে থাকে। অনিক গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ফারুক আহাম্মদ ও সাইমুম রেজা তালুকদার। সহায়তা করেন আবদুস সোবহান তরফদার এবং সহিদুল ইসলাম।
মামলার আগের দিনগুলোতেও টানা সাক্ষ্য ও জেরা হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন দুজন, তবে অনিকের জেরা শেষ না হওয়ায় তা আজ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী শফিকুল ইসলামকে জেরা করেন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা। পরে নেওয়া হয় ৮ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি।
এর আগেও, ২৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন শফিকুল, যিনি সাত নম্বর সাক্ষী। একই দিনে আদালতে উপস্থিত ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী মতিবর রহমান। ১৮ সেপ্টেম্বর ছিল মামলার তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ। ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ১৫ সেপ্টেম্বরও সাক্ষ্য দেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। প্রথম দিন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান আদালতে সাক্ষ্য দেন।
১৪ সেপ্টেম্বর মামলার আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি আশুলিয়ায় ঘটে যাওয়া নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। এরপর ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেয়।
আট আসামির মধ্যে সাতজন অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তার স্বীকারোক্তি আদালতে রেকর্ড করা হয় এবং লিখিত আবেদন জমা দেওয়ার পর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় যেসব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, একই জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, এসআই আবজাল এবং কনস্টেবল মুকুল। অপরদিকে, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজন এখনও পলাতক।
২ জুলাই প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার অভিযোগ জমা দেয়। এতে ৩১৩ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র, ৬২ জন সাক্ষীর তালিকা, ১৬৮ পৃষ্ঠার প্রমাণাদি এবং দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল এই অভিযোগ আমলে নেয় এবং বিচার শুরু হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট, আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছয় যুবক। পরে পুলিশ তাদের মরদেহ একটি ভ্যানে তোলে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। জানা গেছে, এদের মধ্যে একজন তখনো জীবিত ছিলেন, কিন্তু তাকেও পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।