বাংলাদেশে কেউ সম্প্রদায় নয়, সবাই নাগরিক: সালাহউদ্দিন


বাংলাদেশে কেউ সম্প্রদায় নয়, সবাই নাগরিক: সালাহউদ্দিন

বাংলাদেশে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে, এবং কাউকে ধর্মীয় পরিচয়ে ভাগ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এদেশে কেউ সম্প্রদায় নয়, প্রত্যেকে এই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে অধিকার ভোগ করেন।

সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপস্থিত পুণ্যার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা কেউ সম্প্রদায় নই, বাংলাদেশের সবাই সিটিজেন। এদেশের সবাই যার যার, নিজ নিজ ধর্ম চর্চা স্বাধীনভাবে করবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “হয়ত কেউ একেক ধর্মের অবলম্বন করতে পারেন বা ধর্মাবলম্বী হতে পারেন। নিজেরা যেন কেউ সম্প্রদায় হিসেবে পরিচয় না দেই, সিটিজেন হিসেবে পরিচয় দেই।”

বিএনপির আদর্শ তুলে ধরে তিনি বলেন, “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার; ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। সেই নিরাপত্তাটাই আমাদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”

সাবেক এই মন্ত্রী অভিযোগ করেন, অতীতে রাজনৈতিক স্বার্থে সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “অতীতে আমরা দেখেছি, রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন কারণে গত ফ্যাসিবাদী শক্তি আপনাদেরকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, ভোটের বাক্স হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। সেখান থেকে সবাইকে বেরিয়ে যেতে হবে।”

নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা ইদানিং লক্ষ্য করছি, একটি গোষ্ঠী, একটি রাজনৈতিক দল ধর্মের ভিত্তিতে জাতিতে বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়, অনৈক্য সৃষ্টি করতে চায়। আপনারা আমরা সবাই যেন সে ব্যাপারে সজাগ থাকি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিন্ন রকমের ইস্যু সৃষ্টি করে এই দেশে সামনে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।”

বর্তমানে দেশে নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “বাংলাদেশে এখন নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে, বাংলাদেশের মানুষ ভোটের প্রচারে নেমে গিয়েছে। সকল প্রার্থী যারা ইলেকশন করবেন বলে আশা করছেন, সবাই গণসংযোগে নেমে গিয়েছে।”

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এখন যারাই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, যারা বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করবে, তাদেরকে এ দেশের জনগণ চিহ্নিত করবে।”

গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারে দলের দীর্ঘ আন্দোলনের কথা স্মরণ করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা ১৬ বছর সংগ্রাম করছি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য। যেই নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা এখনো হয়নি, যে নির্বাচনের একটা সময়সীমা ঘোষণা হয়েছে, তারপর থেকে আমরা লক্ষ্য করলাম এই নির্বাচন যাতে বিলম্বিত হয় সেই প্রচেষ্টা চালু আছে কোনো কোনো মহল থেকে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ যারা এই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাইবে, তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে প্রত্যাখ্যান করবে।”

হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া নিয়ে বিএনপির প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনাদের কিছু দাবিদাওয়া আমাদের সামনে আগেও দেওয়া হয়েছিল, আমরা এগুলো বিশ্লেষণ করেছি। আগেও আপনাদের সাথে এ নিয়ে কথা হয়েছে। বিএনপির নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের সময়ে আপনাদের নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা আলোচনা করে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আপনাদের যৌক্তিক দাবিদাওয়াগুলো আমরা ধারণ করব।”

তিনি আরও বলেন, “যেমন দেবোত্তর সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তি, সংখ্যালঘু কমিশন এবং ফাউন্ডেশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা যায় কিনা; দেবোত্তর সম্পত্তি এবং অর্পিত সম্পত্তির বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে সেগুলো উদ্ধার করে মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া যায় কিনা; এগুলো সবই সম্ভব। আমরা সেগুলো আমাদের ইশতেহারে ধারণ করব।”

বিএনপির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে সালাহউদ্দিন জানান, দলটি সব ধর্ম, জাতিগোষ্ঠী ও ভৌগোলিক অবস্থানের জনগণকে একত্রিত করে সমন্বিত রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী।

তার ভাষায়, “আমরা বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম, অমুসলিম, পাহাড়ি, সমতলের সকল নাগরিকের সমন্বয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ সমন্বয়ের রাজনীতি করি এবং এই সমন্বয়ের রাজনীতিকে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করি।”

তিনি বলেন, “সুতরাং বিএনপি আমরা যারা করি, যারা বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি, আমরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিতে কোনো বিভক্তি চাই না। আমরা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাই না, কখনো চাইনি।”

সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমাদের সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য নাই আর্টিকেল ২৮ এ এবং সমস্ত ধর্মের উপাসনালয়, কার্যক্রম এবং প্রচারের স্বাধীনতা আছে আর্টিকেল ৪১ এ। কিন্তু কার্যকরভাবে এটার প্রয়োগ আমরা নিশ্চিত করব।”

পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানাই এবং আমাদের দলের পক্ষ থেকে সকল নেতাকর্মীকে আহ্বান জানাই, যতদিন পর্যন্ত এই দুর্গা উৎসব পরিচালিত হবে, সারা বাংলাদেশে আমাদের সকল নেতাকর্মী এই অনুষ্ঠানকে পাহারা দেবে, নিরাপত্তা দেবে।”

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র তৎপর চালু আছে। আমরা সেই ষড়যন্ত্রকে অতীতেও কার্যকর হতে দেইনি, সামনেও এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবো না।”

অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের পর রাতে বনানীর পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যান সালাহউদ্দিন আহমেদসহ দলের অন্য নেতারা।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×