ডিম ছুড়ে প্রতিবাদ: মধ্যযুগ থেকে আজকের রাজনীতি


ডিম ছুড়ে প্রতিবাদ: মধ্যযুগ থেকে আজকের রাজনীতি

খাওয়ার টেবিলের সাধারণ একটি উপাদান, কিন্তু প্রতিবাদে বহুবার রূপ নিয়েছে প্রতীকী অস্ত্রে। বিশ্ব রাজনীতি থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ, ডিম ছুড়ে ক্ষোভ প্রকাশের নজির বহুবার সামনে এসেছে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে রাজনৈতিক মঞ্চ বিরোধীদের লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ যেন এখন আর অচেনা দৃশ্য নয়। তবে এই প্রবণতা নতুন নয়; এর পেছনে রয়েছে শত শত বছরের ইতিহাস।

ঐতিহাসিক সূত্র বলছে, মধ্যযুগে বন্দিদের প্রকাশ্যে শাস্তি দিতে তাদের ওপর ডিম ছুড়ে মারার চল ছিল। আর লিখিত ইতিহাসে প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮০০ সালের দিকে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত দ্বীপাঞ্চল ‘আইল অব ম্যান’-এ মেথোডিস্টদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ১৮৩৪ সালে মার্কিন কবি জর্জ হোয়াইটার দাসপ্রথা বিরোধী বক্তব্য দেওয়ার সময় নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকোর্ড শহরে তার দিকেও ছোড়া হয়েছিল ডিম।

রাজনীতিতে ডিম নিক্ষেপের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে অস্ট্রেলিয়ায়। ১৯১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজ এক জনসভায় ডিমে আক্রান্ত হন, যা কনস্ক্রিপশনবিরোধী আন্দোলনের উত্তাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটেনে ২০০১ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হলে তিনি নিজেই ঘুষি মেরে প্রতিক্রিয়া জানান। মুহূর্তটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচনের প্রচারণায় অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার ডিমের নিশানায় পড়েন। তবে তিনি সেটি হাত দিয়ে সরিয়ে রেখে নির্বিকারভাবে এগিয়ে যান। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ২০০৪ সালে ডিমে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১১ সালে আফগান বিক্ষোভকারীরা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানি কনস্যুলেটের সামনে ডিম নিক্ষেপ করে।

২০১৩ সালে ব্রিটিশ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের অন্ত্যেষ্টিতে তার কফিনে ডিম ছোড়ার হুমকি দিয়েছিলেন একদল বিক্ষোভকারী। যদিও কঠোর নিরাপত্তার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। ওই বছরের আগস্টে ফরাসি কৃষকেরা ডিমের দাম কমে যাওয়ার প্রতিবাদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিদিন এক লাখ ডিম ভাঙার শপথ নেন এবং রাস্তায় তা বাস্তবায়নও করেন।

খাদ্য দিয়ে প্রতিবাদের এই রীতি নিয়ে বিশ্লেষণ দিয়েছেন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যান। তার ভাষায়, “খাবার ছুড়ে মারার কারণ হতে পারে—এটি সস্তা, সহজলভ্য ও দৃশ্যমান। টমেটো বা ডিম নিক্ষেপ করলে ফেটে গিয়ে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি দেয় এবং বিচ্ছিরি পরিস্থিতি তৈরি করে। খাবার দিয়ে আঘাত করাকে সাধারণত অহিংস প্রতিবাদ হিসেবেই দেখা হয়। যেমন- ঢিল ছোড়া হলে পুলিশ পাল্টা গুলি চালাতে পারে, কিন্তু ডিম ছুড়লে তা করলে তারা ‘ফুলিশ’ হিসেবে গণ্য হবে।”

বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে সেই পুরোনো প্রবণতা। বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কিংবা আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের লক্ষ্য করে ডিম ছোড়ার ঘটনা দিনকে দিন বাড়ছে। ফলে মধ্যযুগ থেকে শুরু হওয়া এই প্রতীকী প্রতিবাদের অস্ত্র এখনও সমানভাবে আলোচনায় রয়েছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×