চাকসুতে ৩৫ বছর পর আজ নির্বাচন
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৮:৩৫ এম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদের নির্বাচন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ফিরেছে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের এই উৎসব। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ, যা প্রথমবারের মতো হচ্ছে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) ব্যালট ব্যবস্থায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন জানিয়েছেন, “প্রতিটি ব্যালটে থাকবে ২৪ অঙ্কের নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড, যা মেশিনে শনাক্তযোগ্য।”
নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি ভোটকেন্দ্র ও ৬১টি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ জন ভোটার ভোট দিতে পারবেন। চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। অন্যদিকে হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদের জন্য লড়ছেন ৪৯৩ জন। মোট ভোটারের সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন।
ভোটের সময় ব্যালটে পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে নির্ধারিত পেন দিয়ে বৃত্ত পূরণ করতে হবে। একাধিক বৃত্ত পূরণ হলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে। নির্বাহী সদস্য পদের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচটি, হল ও হোস্টেল সংসদের জন্য তিনটি করে ভোট দেওয়া যাবে। নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি ভোট দিলে সংশ্লিষ্ট পদটির ভোট বাতিল হবে।
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৩টি প্যানেল, যার মধ্যে রয়েছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম সংগঠনসমূহ, স্বতন্ত্র, বৈচিত্র্য ঐক্য, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং সুফী মতাদর্শের ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’।
নির্বাচন ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দায়িত্বে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যরা। পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, এক হাজার ৫০ জন পুলিশ এবং র্যাবের সাইকেল ইউনিটের ৪০ জন সদস্য মাঠে থাকবেন নিরাপত্তা নিশ্চিতে। প্রয়োজনে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সহায়তাও নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ভোটারদের তিন ধাপে নিরাপত্তা চেকিং পেরিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেজন্য নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাইরের কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। সাংবাদিকদের জন্য গোপন ব্যালট কক্ষ ছাড়া ক্যাম্পাসে থাকবে অবাধ প্রবেশাধিকার।”
আজ ক্যাম্পাসে প্রবেশের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তিনটি পথ- কাটা পাহাড়, ৩ নম্বর গোডাউন এবং শহীদ মিনারের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত আর্চওয়ে। প্রবেশের সময় বৈধ বিশ্ববিদ্যালয় আইডি কার্ড দেখানো বাধ্যতামূলক। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ব্যাংক পে-স্লিপ দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
ভোট দেওয়ার সময় ভোটারের পরিচয় মিলিয়ে আইডি যাচাই শেষে হাতে তুলে দেওয়া হবে পাঁচটি ব্যালট পেপার। নির্ধারিত কক্ষে গিয়ে বিশেষ পেন ব্যবহার করে ভোট দিতে হবে। ভোট দেওয়ার পর ব্যালট বাক্সে পেপার ফেলে বিকল্প পথে কেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে, যাতে অতিরিক্ত ভিড় এড়ানো যায়। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের সহযোগিতা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে আচরণ করার অনুরোধ জানিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষভাবে চালু রাখা হয়েছে শাটল ট্রেন ও বাস সার্ভিস। আজ চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে মোট ১১ বার চলবে শাটল ট্রেন। প্রথম ট্রেন ছেড়েছে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সর্বশেষটি ছাড়বে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। ক্যাম্পাস থেকে প্রথম ট্রেন ছেড়েছে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে এবং শেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ১০টি বাস ছাড়াও নিউমার্কেট ও ষোলশহর থেকে সকাল ১০টায় যুক্ত হয়েছে আরও ৫টি অতিরিক্ত বাস। ক্যাম্পাস থেকে বিকেল ৩টা, ৪টা ও সাড়ে ৫টায় এসব বাস ছেড়ে যাবে শহরের উদ্দেশ্যে।
তিন দশকেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও প্রত্যাশার আবহ।