ইরানের হামলায় ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০২:০৩ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি গোপন ইসরায়েলি-মার্কিন সামরিক ঘাঁটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করতে দেয়নি।
১৩ জুন সংঘটিত ওই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ‘দা ভিঞ্চি টাওয়ার্স’ নামের অভিজাত আবাসন প্রকল্পের নিচে অবস্থিত একটি গোপন সামরিক কমান্ড সেন্টার, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে পরিচালনা করত। অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম দ্য গ্রেজোন জানায়, ‘সাইট ৮১’ নামে পরিচিত এই স্থাপনাটি মূলত ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড ও কন্ট্রোল কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এর নকশা ও নির্মাণ তত্ত্বাবধান করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ, প্রায় এক দশক আগে।
হামলার পরপরই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তেল আবিবের উত্তরের আঘাতপ্রাপ্ত এলাকা ঘিরে ফেলে। সাংবাদিকদের সেখানে প্রবেশ ও চিত্র ধারণে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি ফক্স নিউজ-এর রিপোর্টার ট্রে ইয়ংস্টসহ কয়েকজন সাংবাদিককে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয় হাকিরিয়া কমপ্লেক্স ও আজরিলি সেন্টারের কাছাকাছি এলাকা থেকে।
কয়েক ঘণ্টা পর ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ঘোষণা করে, এই হামলা ছিল ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধমূলক অভিযান’। লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা অবকাঠামো।
উল্লেখযোগ্যভাবে, হামলার স্থান গুগল ও ইয়ানডেক্স ম্যাপে অস্পষ্ট এবং সেখানে স্ট্রিট-ভিউ সুবিধাও অক্ষম, যা তেল আবিবে কার্যকর সামরিক সেন্সরশিপের ইঙ্গিত দেয়।
দ্য গ্রেজোন-এর অনুসন্ধান আরও জানায়, ‘দা ভিঞ্চি কমপ্লেক্স’ ছিল ২০১৩ সালে মার্কিন আর্মি কর্পস অব ইঞ্জিনিয়ার্সের একটি প্রকল্পের অংশ। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ হাজার বর্গমিটার জায়গা নিয়ে নির্মিত হয় ‘সাইট ৮১’ নামের একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সুরক্ষা যুক্ত বাঙ্কার। ভূ-স্থান বিশ্লেষণ, ফাঁস হওয়া ইমেইল এবং সরকারি রেকর্ড ঘেঁটে এই স্থাপনাটির অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই সামরিক কমপ্লেক্সটি একটি শিশুদের খেলার মাঠ এবং একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে মাত্র ১০০ মিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত, যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সমালোচকরা অভিযোগ তুলছেন, ইসরায়েল জনবহুল এলাকায় এমন স্পর্শকাতর সামরিক স্থাপনা স্থাপন করে বেসামরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, এমন অভিযোগ যা তারা বহুদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তুলে আসছে।
এই ঘাঁটির গুরুত্ব নিয়ে ফাঁস হওয়া বেশ কিছু চিঠিপত্রেও ইঙ্গিত মেলে। প্রাক্তন ন্যাটো কমান্ডার জেমস স্ট্যাভ্রিডিস ও ইসরায়েলের সাবেক সেনাপ্রধান গাবি আশকেনাজির মধ্যে আদানপ্রদান হওয়া বার্তাগুলোতে ‘সাইট ৮১’-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই উঠে আসে। ২০১৫ সালের এক চিঠিতে স্ট্যাভ্রিডিস উল্লেখ করেন, “মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থিঙ্কলজিক্যাল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) সঙ্গে ‘সাইট ৮১’-এ একটি বড় চুক্তি সম্পন্ন করেছে।”
তেল আবিবের ‘দা ভিঞ্চি কমপ্লেক্স’-এর পেছনে রয়েছে ইসরায়েলি-মার্কিন বিনিয়োগকারীদের অর্থায়ন, যাদের অনেকেই ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি চেক পয়েন্ট টেকনোলজিস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান এআই২১ ল্যাবস, যেটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ‘৮২০০’-এর সাবেক সদস্যরা।
হামলার পর ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করা হয় বলে জানিয়েছে ফ্রান্স টয়েন্টিফোর-এর বিশ্লেষণ। হারেৎজ পত্রিকায় দা ভিঞ্চি কমপ্লেক্সের ছবি ছাপা হলেও, সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তথ্য প্রকাশ পেতে সময় লেগে যায় প্রায় দুই সপ্তাহ। বিশ্লেষকদের মতে, এতে হামলার পরিণতি গোপন রাখার স্পষ্ট প্রচেষ্টা দেখা যায়।
সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি