পাকিস্তানের হামলায় আফগানিস্তানে নিহত ১২, আহত শতাধিক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০২:১৯ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত। সাম্প্রতিক এক সামরিক অভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১২ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে শতাধিক। এ সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু ছিল উত্তরপশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার কুররম সীমান্ত এলাকা।
বুধবার ১৫ অক্টোবর সকালে আফগান তালেবান সরকারের মুখপাত্র এক্স-এ এক পোস্টের মাধ্যমে প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রথম এই খবর প্রকাশ করে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানায়, মঙ্গলবার বিকালে আফগান সেনাবাহিনী ও নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) যৌথভাবে কুররম সীমান্তে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর “বিনা উসকানিতে” হামলা চালায়। এরপরই পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, যার জেরে বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দাবি, রাতভর সংঘর্ষে আফগান সেনাবাহিনীর চারটি সীমান্ত পোস্ট এবং ছয়টি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে। জবাবি হামলায় আফগান বাহিনীর একটি পোস্ট ও একটি ট্যাংক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় টিটিপির একজন শীর্ষস্থানীয় কমান্ডারও নিহত হন বলে দাবি করা হয়।
সেনাবাহিনীর সূত্র জানায়, লড়াই শুরুর মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই খোস্ট প্রদেশের শামশাদ নামক আফগান সেনাপোস্ট ধ্বংস করে পাকিস্তানি বাহিনী। পরে ওই প্রদেশেরই আরেকটি পোস্ট, নার্গসার, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, যেখানে আরও চারটি ট্যাংক ধ্বংস করা হয় বলে জানানো হয়।
এছাড়াও আফগানিস্তানের তুর্কমানজাই ও পোলসেন সেনাপোস্টেও অভিযান চালানো হয়। তুর্কমানজাই পোস্টে ধ্বংস হয় ষষ্ঠ ট্যাংকটি। আর পোলসেন পোস্টের কাছে অবস্থিত একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করার কথাও জানানো হয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তরফে।
জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, হামলার সময় আফগান সেনারা টিকতে না পেরে একাধিক পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে যান। কিছু পোস্টে সেনারা আত্মসমর্পণের ইঙ্গিতে সাদা পতাকা উড়িয়েছিলেন বলেও দাবি করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, এসব পোস্টে আফগান সেনা এবং টিটিপির একাধিক সদস্য নিহত হয়েছে।
এর আগে চলতি মাসের ১১ অক্টোবরও দুই দেশের সীমান্তে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় আফগান বাহিনী আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর, কুররম, দির, চিত্রাল এবং বারামচা সহ কয়েকটি এলাকায় হামলা চালায়। তখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ২০০ জনের বেশি সেনা এবং পাকিস্তানের ২৩ জন সেনা নিহত হন।
এই হামলার পেছনে কারণ হিসেবে আফগান তালেবান সরকার জানায়, ৯ অক্টোবর পাকিস্তানের এক বিমান হামলায় কাবুলে টিটিপি নেতাদের আশ্রয়দাতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, যা তাদের মতে আফগানিস্তানের “সার্বভৌমত্বে সরাসরি লঙ্ঘন”। এর প্রতিক্রিয়াতেই ১১ অক্টোবর তারা পাল্টা হামলায় যায়।
সীমান্তে চলমান এই উত্তেজনা দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন উভয় দেশের ভেতরেই নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক।
সূত্র: রয়টার্স