উপদেষ্টা আসবেন বলে সংস্কার, জলে যাবে ২ কোটি টাকা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৮:৩৩ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকায় অস্থায়ী সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সফরের জন্য দ্রুত এই কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন। সংস্কারের জন্য খরচ করা হয়েছে দুই কোটি টাকারও বেশি, যা পরবর্তীতে উপদেষ্টার সফরের পর সরিয়ে ফেলা হবে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) টানা তৃতীয় দিনে এই অস্থায়ী সংস্কারের কাজ চলেছে। সংস্কারের কারণে মহাসড়কে যানজটও সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এই অংশের নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনীতি পরিষদ অনুমোদন দেয়। ৫১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের মাধ্যমে। তবে করোনা মহামারি, বালু সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রকল্প বেশ কয়েক দফা পিছিয়ে যায়।
প্যাকেজ-১ এর আওতায় আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে ৮ বছর লেগেছে। প্রকল্পের পূর্বনির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও বর্ষাকালে বড় বড় গর্তের কারণে সড়কটি যান চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
উপদেষ্টার আগমনকে কেন্দ্র করে বিশ্বরোড গোল চত্বর এলাকায় মূল মহাসড়ক থেকে ১৫ ইঞ্চি উঁচু করে কয়েক স্তরের ইট বিছানো হয়েছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, যা চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অস্থায়ী সংস্কার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রেজোয়ান মাহমুদ বলেন, “রাষ্ট্রীয় অতিথি আসবে বলে অস্থায়ীভাবে কাজ করা হচ্ছে। আমরা চাই স্থায়ী মেরামত হোক। রাত-দিন যানজট লেগে থাকে। এখন ইটগুলো আবার সরিয়ে ফেলা হবে, এতে জনগণ এবং রাষ্ট্রের টাকা উভয়ই অপচয় হবে।”
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের চালক শাহজাহান জানান, “বিশ্বরোডের এই অংশে গাড়ি চালাতে ভয় লাগে। আমরা চাই একবারেই স্থায়ী মেরামত হোক।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, “রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি, তবু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। স্থায়ী মেরামত হলে যানজটও কমবে।”
প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, “অস্থায়ী সংস্কার জনদুর্ভোগ এড়ানোর জন্য। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে এবং দ্রুত স্থায়ী কাজ শুরু হবে। তখন বর্তমান ইটবালু সরানো প্রয়োজন হবে।”
এক সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা জানান, “এই অস্থায়ী সংস্কার কাজের খরচ দুই কোটি টাকার বেশি হবে। এটি ঠিকাদারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। স্থায়ী কাজ শুরু হলে ইট ও বালু সরিয়ে নেওয়া হবে।”
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চার বিভাগের ২১ জেলার প্রায় ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে।