ফরিদপুরে দফায় দফায় সংঘর্ষে অচল বাস চলাচল, আহত অন্তত ১০
- ফরিদপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:৪১ পিএম, ২২ জুলাই ২০২৫

ফরিদপুরে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষে রূপ নেয় মানববন্ধন কর্মসূচি। মঙ্গলবার দুপুরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুই পক্ষের দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। পরিস্থিতির উত্তেজনায় বন্ধ হয়ে যায় জেলার সব বাস চলাচল।
ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনকে অবৈধ দাবি করে বিক্ষোভে নামে একাংশের শ্রমিকেরা। তারা দুপুরে শহরের পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধনের আয়োজন করে। তবে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই সেখানে উপস্থিত হয়ে হামলা চালায় নির্বাচিত কমিটির পক্ষের নেতা ইয়াছিন মোল্লার নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি। এ সময় লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত প্রায় ৫০ জন হামলাকারী মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয় এবং তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের মারধর করে এবং তাদের “আওয়ামী লীগের দোসর” বলে শ্লোগান দিতে দেখা যায়। ঘটনার জেরে সাধারণ শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর ১২টা থেকে জেলার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা লাঠিসোটা নিয়ে টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নেয়।
দুপুর ২টার দিকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শ্রমিক সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ইয়াছিন মোল্লা এবং সাবেক সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেনের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
সংগঠনের একাধিক সাবেক নেতা ও সাধারণ শ্রমিকরা জানান, সংগঠনের ৭ হাজার ২০০ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ২ জনকে ভোটার দেখিয়ে আগামী ২৫ জুলাই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ১৭ জুলাই নির্বাচন কমিশনার সবাইকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
সাবেক সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের অধিকাংশ শ্রমিকদের না জানিয়ে গোপনে নির্বাচন করা হয়। কোনো তফসিল ঘোষণা না করে এবং ভোটার তালিকা না টাঙিয়েই অবৈধভাবে নির্বাচন দেখিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নটি দখল করা হয়। যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হলে সেখানেও ইয়াছিন মোল্লার নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এরপর সাধারণ শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। আমরা সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের দাবি জানাই এবং শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার চাই। যতক্ষণ সু্ষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস না পাব, ততক্ষণ শ্রমিকরা বাস চালাবে না।”
অন্যদিকে, নির্বাচিত সভাপতি ইয়াছিন মোল্লা বলেন, “এই আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও চাঁদাবাজি করতেছে। আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, এই নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্ত করতে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। আজ আওয়ামী লীগের দোসররা একত্রিত হয়েছিল, তখন আমরা সাধারণ শ্রমিকরা বাঁধা দিয়েছি।”
এদিকে, হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। যাত্রীদের কাউকে কাউকে ফিরে যেতে দেখা গেছে, কেউ আবার বিকল্প ব্যবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন।
ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, “শ্রমিকদের মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের উত্তেজনা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে তবে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। দ্রুতই বাস চলাচল স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করতে আলোচনা চলছে।”