কারাগার থেকে ফের প্রিজন সেলে সেই মা ও ১২ দিনের শিশু


কারাগার থেকে ফের প্রিজন সেলে সেই মা ও ১২ দিনের শিশু

মানব পাচার মামলায় জামিন না মেলায় খুলনা জেলা কারাগার থেকে ফের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠানো হয়েছে শাহজাদী নামে এক নারী ও তার ১২ দিন বয়সী নবজাতক কন্যাকে। রোববার রাতে চিকিৎসকের পরামর্শে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের হাসপাতালে পাঠায়। বর্তমানে তারা হাসপাতালে পৃথক কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সোমবার সকালে খুলনা অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আনিসুর রহমানের আদালতে শাহজাদী এবং তার মা নার্গিস বেগমের জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করা হয়। আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান জানান, “মঙ্গলবার সকালের মধ্যে আদালতের আদেশের অনুলিপি তুলতে পারলে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করা হবে। মূলত মামলায় মানব পাচারের মামলায় নিম্ন আদালতে জামিনের এখতিয়ার নেই। মঙ্গলবার মহানগর আদালতে বাদীর আবেদনও তুলে ধরব। আশা করি জামিন হয়ে যাবে।”

জানা যায়, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সিরাজুল ইসলাম ও ফকিরহাটের মেয়ে শাহজাদীর সংসারে চারটি কন্যাসন্তান রয়েছে। গত বছর তিনি ফের গর্ভবতী হলে স্বামী ও পরিবারের পক্ষ থেকে পুত্রসন্তানের জন্য চাপ তৈরি হয়। মেয়ে হলে বিচ্ছেদের হুমকিও দেওয়া হয়। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১১ সেপ্টেম্বর সিজারিয়ানের মাধ্যমে শাহজাদী কন্যাসন্তান জন্ম দেন। এতে অসন্তুষ্ট হয়ে স্বামী সিরাজুল হাসপাতাল ত্যাগ করেন এবং এরপর আর ফিরে আসেননি।

চাপে দিশেহারা হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে শাহজাদী হাসপাতালের আরেক প্রসূতির নবজাতক পুত্র সন্তান চুরি করেন। সিসিটিভি ফুটেজ ও পুলিশের তৎপরতায় ওই দিন সন্ধ্যায় শিশুটি উদ্ধার হয় এবং শাহজাদীর মা নার্গিস বেগমকে আটক করা হয়। পরে চুরি যাওয়া শিশুর বাবা মির্জা সুমন মানব পাচার আইনে মামলা করেন শাহজাদী ও তার মায়ের বিরুদ্ধে।

মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নার্গিস বেগমকে ছয় দিন আগে কারাগারে পাঠানো হয়। শাহজাদী হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন ছিলেন, তার সঙ্গে ছিলেন নবজাতক কন্যা। ২১ সেপ্টেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হলে ১২ দিন বয়সী শিশু কন্যাও মায়ের কোলে করে কারাগারে যায়।

খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, “রাতে শাহজাদী নামের নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়া শিশুটির বয়স মাত্র ১২ দিন। কারাগারে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে রাতেই তাদের হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠানো হয়।”

চুরি যাওয়া শিশুর বাবা মির্জা সুমন বলেন, “আমার ছেলে ও শাহজাদী আপার মেয়ে একই দিন জন্ম নিয়েছে। আমার বাচ্চা জন্মানোর পর বুকের দুধ পাচ্ছিল না। তখন শাহজাদী আপা তার মেয়ে ও আমার ছেলেকে একসঙ্গে দুধ খাইয়েছে। চুরির সংবাদে আমি দিশেহারা হয়ে মামলা করি। এখন বুঝতে পারছি নানামুখী চাপ সামলাতে না পেরে ভুল করেছি। আমি এই মামলা চালাতে চাই না। উকিলকে এই কথা বলেছি।”

তদন্ত কর্মকর্তা ও খুলনা সদর থানার এসআই শাহীন কবির বলেন, “বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারাধীন। সিদ্ধান্ত আদালত থেকেই আসতে হবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×