ইউজিসি–বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে পরিচালিত হিট প্রকল্পে সেরা দশে নোবিপ্রবি


ইউজিসি–বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে পরিচালিত হিট প্রকল্পে সেরা দশে নোবিপ্রবি

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত “হায়ার এডুকেশন অ্যাকসেলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (HEAT)” প্রকল্পে দেশের সেরা দশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি বিভাগের মোট ৭টি গবেষণা প্রকল্প এ প্রকল্পের আওতায় অনুমোদন পেয়েছে।

ইউজিসি'র এই ৫ বছর মেয়াদী (২০২৩-২০২৮) প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সারা দেশ থেকে জমা পড়া ১৪৮১টি উপ-প্রকল্পের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১৫১টি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। এর মধ্যে নোবিপ্রবির ৬টি গবেষণা প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, যার তত্ত্বাবধানে আছেন ৫টি বিভাগের ৬ জন শিক্ষক। এই সাফল্যের কারণে নোবিপ্রবি দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছে।

হিট প্রকল্পের আওতায় নোবিপ্রবির ৫টি বিভাগের ৭টি গবেষণা প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।

মনোনীত শিক্ষকরা হলেন- কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আসাদুন নবী, মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাকিব-উল-ইসলাম, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম শহীদ-উদ-দৌলা, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল কাইয়ুম মাসুদ, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাদ্দম হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম কিবরিয়া।

হিট প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষক ও গবেষকদের থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। মোট ১৪৮১টি উপ-প্রকল্প জমা হয়, যাচাই-বাছাই শেষে ১৫১টি উপ-প্রকল্প চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। হিট প্রকল্প ৫ বছর মেয়াদি (২০২৩-২০২৮) এবং এর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এর মধ্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বরাদ্দ পেয়েছেন ৫৫৬.০৪ লাখ টাকা, প্রফেসর ড. আ ফ ম শহীদ-উদ-দৌলা বরাদ্দ পেয়েছেন ৪৪৮.৪০ লাখ টাকা, প্রফেসর ড. আসাদুন নবী বরাদ্দ পেয়েছেন ৪৪৭.৩৩ লাখ টাকা, প্রফেসর ড. আবদুল কাইয়ুম মাসুদ বরাদ্দ পেয়েছেন ৯৯.৮৩ লাখ টাকা, প্রফেসর ড. রাকিব-উল-ইসলাম বরাদ্দ পেয়েছেন ৩৩৩.১৪ লাখ টাকা, মো. সাদ্দম হোসেন (অর্থনীতি) বরাদ্দ পেয়েছেন ৯৯.৭৮ লাখ টাকা।

এর মাধ্যমে দেশের সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)।

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বাধিক ২২টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এরপরে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (১৪টি), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১২টি), বুয়েট (১১টি), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (১১টি), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১১টি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (৯টি), গাজীপুরের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (৭টি) এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (৬টি)।

গত বুধবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং উপ-প্রকল্পপ্রাপ্ত পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারগণ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউজিসির মাননীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন।

নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, ‘হিট প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে। এই প্রকল্প দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি নোবাখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট সাতটি গবেষণা প্রকল্প হিট প্রকল্পের আওতায় অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্পে পাঁচটি বিভাগের ছয়জন শিক্ষক সুপারভাইজার হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এ ধরনের উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রজন্মকে গবেষণামুখী করবে এবং উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রিজওয়ানুল হক বলেন, ‘ইউজিসির হিট প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। হিট প্রকল্প নিয়ে আলোচনার পর আমরা শিক্ষকদের নানা সমস্যা চিহ্নিত করেছি। এ জন্য কুমিল্লার বার্ডে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল। দেশের ৩জন বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সেই কর্মশালায় আমাদের শিক্ষকদের প্রজেক্ট প্রপোজালে সহায়তা করেছেন। এর ফলে আমাদের শিক্ষকরা প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ পেতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের কয়েকজন শিক্ষক যে বরাদ্দ পেয়েছেন, তার অর্থ থেকে একাডেমিক ভবন–৩-এর দ্বিতীয় তলায় তিনটি আধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থের সাশ্রয় করবে। বর্তমানে আমাদের অনেক বিভাগে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এই প্রকল্পের অর্থায়নের মাধ্যমে আমরা গবেষণায় পিএইচডি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সহায়তা করতে পারব এবং আমাদের পিএইচডি প্রোগ্রামের গুণগত মান অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আরও উন্নত হবে বলে আমি আশাবাদী। আমাদের লক্ষ্য শুধু এই প্রকল্পেই সীমাবদ্ধ নয়। ভবিষ্যতে আরও সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্প অর্জনের জন্য আমরা আগামী সপ্তাহ থেকেই নিয়মিত প্রশিক্ষণ সেশন আয়োজন করব। শেষ পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বুটক্যাম্পেরও আয়োজন করা হবে, যাতে শিক্ষকদের প্রকল্প প্রস্তাবনা লেখায় কোনো ধরনের ভুল না থাকে।’

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক প্রকল্পের মধ্য থেকে আমাদের প্রকল্প নির্বাচিত হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে আমার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের বিষয়। এটি আমাদের কঠোর পরিশ্রম, গবেষণা এবং পরিকল্পনার ফল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে অনুদান আমরা পেয়েছি, তা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট গবেষণার জন্য নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সহায়তা প্রদান করবে। বিশেষভাবে, আমাদের ল্যাব ফ্যাসিলিটিজকে আরও আধুনিক ও উন্নত করা সম্ভব হবে, যা গবেষণা এবং শিক্ষাদানের মান বৃদ্ধি করবে। এছাড়াও, এই প্রকল্পের সুবিধা সরাসরি মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও পৌঁছাবে, তাদের গবেষণা কার্যক্রম, পরীক্ষামূলক কাজ এবং শিক্ষাগত উন্নয়নের জন্য বিশেষ সুযোগ তৈরি হবে। এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণা পরিবেশকে আরও শক্তিশালী ও মানসম্পন্ন করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×