মির্জা ফখরুল
‘আমরা তো তোমাদের মার্কাতে বাধা দিইনি, তাহলে বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন!’
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:২৮ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫

বিএনপির নির্বাচনের প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে অযথা কেন টানাটানি; প্রশ্ন করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘ভাই আমরা তো তোমাদের মার্কাতে বাধা দিইনি। তোমাদেরকে তোমাদের মার্কা দেবে নির্বাচন কমিশন, সেটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনের শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শহীদ জেহাদ স্মৃতি সংসদ।
বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, “ভাই আমরা তো তোমাদের মার্কাতে বাধা দিইনি। তোমাদেরকে তোমাদের মার্কা দেবে নির্বাচন কমিশন, সেটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।” কারও নাম উল্লেখ না করলেও তার ইঙ্গিত ছিল প্রতীক বিতর্কে জড়িত দল বা ব্যক্তিদের দিকে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘শাপলা’ প্রতীক দাবি করে আলোচনায় আসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কমিশন তাদের এই প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দলটি। বৃহস্পতিবার, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কমিশনে গিয়ে বলেন, “হয় শাপলা প্রতীক দিতে হবে নয়তো ধান, সোনালি আঁশ বাদ দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “শাপলা প্রতীক ছাড়া এনসিপি নিবন্ধন নেবে না।”
এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার মির্জা ফখরুল বলেন, “কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল, তারা ধমক দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে যে অমুক মার্কা না দিলে আমরা নির্বাচনে যাব না বা ওমুকের মার্কা থাকতে পারবে না। আমরা এ কথা বলি নাই যে তোমাদেরকে মার্কা দেওয়া যাবে না। তাহলে অযথা বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন।”
ধানের শীষ প্রতীক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি গ্রামবাংলায় মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে এবং দিন দিন এর প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে। “গ্রামেগঞ্জে যেখানে যাবেন, সেখানে একটাই স্লোগান শুধু ধান লাগাও, ধান লাগাও; এটাই হচ্ছে প্রধান সমস্যা। ওই জন্য ধানের শীষকে রুখে দিতে হবে, আটকে দিতে হবে। কারণ, ধানের শীষ জিতে গেলে ওই যে বাংলাদেশের শত্রুরা আছে, সে শত্রুরা তাদের সব ষড়যন্ত্র থেকে পরাজিত হয়ে চলে যেতে বাধ্য হবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মনস্টার (দানব) শেখ হাসিনা এমনি এমনি দিল্লি পলাইয়া যায়নি, যেতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, আমরা সে ভিত্তি তৈরি করেছি। দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করে সংগ্রাম করে রক্ত দিয়ে আমরা সেই ভিত্তি অর্জন করেছি।”
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “কয়েক দিন লাফালাফি করলে গণতন্ত্র হয় না। গণতন্ত্র গড়তে হলে অনেক পরিশ্রম দরকার, ত্যাগ দরকার, জনগণের কাছে যাওয়া দরকার। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য মানুষের কাছে যাওয়া পার্টি।”
সরকারি প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ফখরুল অভিযোগ করেন, “দেখছি আমলাতন্ত্রকে একটি দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র, সরকার থাকতে হবে নির্বাচনের সময়। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কোনো দলের কাছে যেন মাথা নত না করে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান ১৯৯০ সালের আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে শহীদ জেহাদের লাশ রেখে আমরা শপথ করেছিলাম স্বৈরাচার পতনের। পরের দিন হরতাল কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। আহত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে আমরা শহীদ মিনারে গিয়ে আবার শপথ নিই। শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচারের পতন করতে সফল হয়।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের সঞ্চালনায় আয়োজিত স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।