যে পরিমাণ খরচ, সে পরিমাণ যোগান হচ্ছে না: এনবিআর চেয়ারম্যান
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:৪৪ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

রাজস্ব ঘাটতির কারণে দেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় যদি রাজস্ব আহরণ উল্লেখযোগ্যভাবে না বাড়ে এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, "যে পরিমাণ খরচ হয়, সে পরিমাণ যোগান হচ্ছে না।" মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর স্কাই সিটি হোটেলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘অন্তরঙ্গন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
চেয়ারম্যানের মতে, দেশের অর্থনীতি নিয়ে যত বিশ্লেষণই হোক, সবকিছুর সারকথা একটাই রাজস্ব আয়ের পথ প্রশস্ত না করলে অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তার ভাষায়, “আমরা অনেক সময় বলি, জিডিপি ক্যালকুলেশনে ভুল আছে কিনা। এত এত অব্যাহতি দেই, সেগুলো তো অবশ্যই কারণ। বড় কারণ হচ্ছে কমপ্লায়েন্স লেবেল খুবই দুর্বল। এই জায়গায় রেভিনিউ সৈনিকদের প্রচুর কাজ করার আছে।”
তিনি বলেন, বিশ্বের যেকোনো দেশের মতোই বাংলাদেশেও কর আদায়ের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পৃথিবীর যেকোনো দেশে রেভিনিউ সৈনিক যারা, তাদেরকে আন্ডারমাইন্ড করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।”
আয়কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আবদুর রহমান খান বলেন, আয়কর বিভাগ একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবার, যেখানে সবাই এই পরিবারের অংশ। যদিও বিভিন্ন ইস্যুতে পারস্পরিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তবে সেটি কাটিয়ে ওঠার আহ্বান জানান তিনি। “নানান কারণে এই দূরত্ব তৈরি হতে পারে। একটা হতে পারে ইনফরমেশন গ্যাপ অথবা এক্সপেন্ডেশন গ্যাপ অথবা রেভিনিউ ইনকাম। যে কারণেই হোক, সেখান থেকে শিখবো। সব কিছু ভুলে নতুন উদ্যমে শুরু করতে চাই।”
তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে এবং এতে বিভাজন বা গ্যাপ অনেকটাই কমে আসবে।
চেয়ারম্যান জানান, গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও সক্রিয় করতে কর অঞ্চলে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল ও আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট যেহেতু পর্যাপ্ত কার্যক্রম চালাতে পারছে না, তাই প্রতিটি কর জোনকে নিজ উদ্যোগে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। “সম্প্রতি আমরা সব কর অঞ্চলে একটি নির্দেশনা জারি করেছি, যে কীভাবে প্রতিটি জোনে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা যায়।”
ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সের দুর্বলতার একটি উদাহরণ তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন থেকে বাধ্যতামূলক কর কর্তনের বিধান থাকলেও বাস্তবে অনেকেই তা মানছেন না। তিনি জানান, আইবাস সিস্টেম থেকে সংগৃহীত সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাদের আয় করযোগ্য, তারা মাসিক বেতন থেকে কর কর্তন করছেন না। অথচ ২০১৪ সালের ফাইন্যান্স অ্যাক্ট অনুযায়ী এই কর্তন বাধ্যতামূলক।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গতকাল আইবাস সিস্টেম থেকে ডেটা নিয়েছি যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কতজন বেতন থেকে ট্যাক্স কাটেন... দেখা গেছে, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে অনেক বড় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাদের ইনকাম করযোগ্য, অথচ তারা মাসে মাসে বেতন থেকে ট্যাক্স কাটছেন না।”
চলমান অব্যবস্থাপনার প্রেক্ষিতে সব সচিবকে চিঠি পাঠানোর বিষয়েও অবহিত করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। “গতকাল চিঠি ড্রাফট করেছি, আজ সব সচিবকে ডিও লেটার দিয়েছি যে, আপনার দপ্তর বা অধিদপ্তরে যারা আছেন, তাদের বেতন থেকে ট্যাক্স কাটেন না। আপনি অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসারকে ইনস্ট্রাকশন দেবেন, যেন ট্যাক্স কর্তন করা হয়।”
এমনকি এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও এই কর কর্তনের বাইরে রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জিএম আবুল কালাম কায়কোবাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এবং এনবিআরের সদস্য (করনীতি) ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী। সূচনা বক্তব্য দেন সংগঠনের মহাসচিব ও কর পরিদর্শন পরিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মহিদুল হাসান।