এবি পার্টি
বিভেদ-অনৈক্য অব্যাহত থাকলে অনিবার্য ওয়ান ইলেভেনের দিকে যাবে দেশ: মঞ্জু
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:২৭ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০২৫

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পদধ্বনি নয়, আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি ২০০৭ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে যেদিকে বাংলাদেশ যাচ্ছিল, এখন আবার সেই একই পথে হাঁটছে পুরো জাতি।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো না যায় এবং বিভেদ-বিদ্বেষে নেতৃত্ব ভুল পথে চলতে থাকে, তাহলে দেশ এক নতুন ওয়ান ইলেভেনের দিকে এগিয়ে যাবে।
সংবিধান অনুযায়ী যদি সাংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি বাস্তবায়ন সম্ভব না হয়, তাহলে গণঅভ্যুত্থনে জড়িত দলগুলোর পারস্পরিক সমঝোতায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন শহীদদের এবং কৃতজ্ঞতা জানান আহত ও প্রতিবাদে অংশ নেওয়া সর্বস্তরের মানুষকে।
তিনি বলেন, এই দেশের নাগরিক অধিকার কখনোই পূর্ণতা পায়নি। ১৯৪৭-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলন কোনোটিই নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি।
মঞ্জু বলেন, ৯০-এর গণআন্দোলন স্বৈরতন্ত্র হটাতে পারলেও গণতন্ত্রকে টেকসই করতে পারেনি। আর ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশের ওপর যে ভয়াবহ দমননীতি চালানো হয়েছে যেখানে হেলিকপ্টার থেকে গুলি, লাশ গুম, গণকবর তা এক ভয়াল অধ্যায় হয়ে থাকবে।
তিনি কৃতজ্ঞতা জানান সাহসী সাংবাদিকদের, যাঁরা সেই দমন-পীড়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি বলেন, মায়েরা, প্রবাসীরা, এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারাও প্রথা ভেঙে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন।
এবি পার্টি গোপনে নয়, বরং সংগঠিতভাবে সাহসিকতার সঙ্গে গণআন্দোলনে অংশ নিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। শিক্ষার্থী গ্রেফতারের পর আইনি সহায়তা, আহতদের চিকিৎসা, রাজনৈতিক ঐক্য গঠন, আলেম-ওলামাদের সম্পৃক্ততা সবক্ষেত্রে এবি পার্টি সরব ও সক্রিয় ছিল বলে জানান মঞ্জু।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, সেখান থেকে ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে বর্তমান ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলন।
যারা এখন আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে টানাহেঁচড়া করছেন, তাদের উদ্দেশে মঞ্জুর মন্তব্য: আপনাদের শ্রেষ্ঠত্ব মানতে আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু যদি সব শ্রেণির মানুষ রাজপথে নামতেন না, তাহলে শহীদের রক্ত বৃথা যেত।
এসময় তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনার পতন। কিন্তু এখন কেউ কেউ বিভেদের রাজনীতি শুরু করেছেন। গোপন তথ্য ফাঁস করার প্রবণতা জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। জাতির কণ্ঠস্বর হয়ে আমরা সবাইকে সতর্ক করছি।
এবি পার্টি চেয়ারম্যান দাবি করেন, জুলাই অভ্যুত্থনের শহীদ আবু সাঈদকে সর্বপ্রথম ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি দিয়েছে তার দলই। তিনিই প্রথম ড. ইউনূসকে প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এই দেশে এখনও শেখ হাসিনার এবং ভারতের ছায়া বিদ্যমান। ফ্যাসিবাদ রূপ বদলেছে মাত্র। একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টি এখনই বিবেচনায় নিতে হবে। নইলে আগত সংকটের দায় সবাইকে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই নিয়ে যেন কোনো বিভেদ না তৈরি হয়। ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ যেন অলঙ্কার না হয়ে ওঠে, বরং বাস্তবায়নযোগ্য একটি ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হোক।
এসময় দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, জুলাইকে ধারণ করতে হলে শহীদদের বেওয়ারিশ করে রাখা চলবে না। দ্রুত শনাক্ত করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর জুলাই সনদটি যদি সব রাজনৈতিক দলের পরামর্শে তৈরি হতো, তাহলে তা হতো আরও গ্রহণযোগ্য ও সার্বজনীন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন– সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, আলতাফ হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী) সাঈদ নোমান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহ আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন।