জকসু নীতিমালা পাস, উচ্ছ্বাসে মুখর জবি ক্যাম্পাস


জকসু নীতিমালা পাস, উচ্ছ্বাসে মুখর জবি ক্যাম্পাস

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পাস হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নীতিমালা। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে  নীতিমালাটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এ খবর জানাজানি হতেই বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই (২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর) শিক্ষার্থীরা জকসু গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দুই দশক ধরে নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তারা আজ সেই দাবির বাস্তবায়নের সাক্ষী হতে পেরেছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ’এই নীতিমালা পাসের মাধ্যমে জবিয়ানদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হলো।’

নীতিমালা পাসের পরপরই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে সরব হয়ে উঠেছেন। তারা ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী বান্ধব নানা কর্মসূচি গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার বাস্তবায়নেও উদ্যোগী হচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নীতিমালা অনুমোদনের পর বুধবার (২৯ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা হাসানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক প্রধান বলেন, “নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন বলেন,"আমরা চাই না ‘নীলক্ষেত মার্কা’ কোনো নির্বাচন হোক। সবার জন্য সমান সুযোগ ও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি নির্বাচন কমিশনের কাছে।”

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “গোলাম মোস্তফা স্যার একজন সিনিয়র ও সম্মানিত শিক্ষক। তিনি সবসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-সংগ্রামে পাশে ছিলেন। আমরা আশা করি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। যদি কখনো তিনি নৈতিকতার বাইরে যান, তবে আমরা তাকে অযোগ্য বিবেচনা করব।”

জাতীয় ছাত্র শক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। আমরা শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আমাদের কার্যক্রম তুলে ধরবো। এতদিন আমরা কী কাজ করেছি, তা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ মণ্ডল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছরে প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে—এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের বিষয়। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জবিয়ানদের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবেন।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী  আমিনুল ইসলাম বলেন, "জবিয়ানদের দীর্ঘদিনের দাবি জকসুর নীতিমালা অনুমোদন হয়েছে, এতে আমরা জবিয়ানরা উচ্ছ্বসিত।এতে করে জবিয়ানরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি বৈধ কর্তৃপক্ষ পাবে।বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি, কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্বেও মেয়েদের জন্য একটি হল ছাড়া সম্পূর্ণ অনাবাসিক। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজের কোন অগ্রগতি নাই, এছাড়াও নানাবিধ সমস্যায় জর্জড়িত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করুক |"

দীর্ঘদিন ধরে আবাসন সংকট, ক্লাসরুম ঘাটতি ও বিশুদ্ধ পানির মতো নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষার্থীরা জকসুকে তাদের দাবি আদায়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছেন। তাদের আশা, এই নির্বাচন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×