১৪ কোটি টাকায় ক্যান্সার হাসপাতালে কি ঢুকলো, প্রশ্ন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০২:৩৪ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা টাকা নয়, বরং দুর্নীতি, অপচয় এবং জটিল প্রশাসনিক ব্যবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, একই ধরনের দুটি চিকিৎসা যন্ত্রের মধ্যে ১৪ কোটি টাকার পার্থক্য কীভাবে হয়েছে এবং এই অতিরিক্ত অর্থটি হাসপাতালের কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মহাখালীয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং জটিলতা নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করেন।
নূরজাহান বেগম বলেন, "একটি মেশিনের দাম ২৪ কোটি, অন্যটির ৩৮ কোটি টাকা; মান প্রায় একই, কিন্তু দামের পার্থক্য ১৪ কোটি কেন? কারণ সিস্টেমে এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, যা বাস্তবে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই জটিল ব্যবস্থা রোগীর চিকিৎসা বিলম্বিত করছে এবং জনগণের অর্থ অপচয় করছে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকারি খাতে যন্ত্রপাতি কেনা বা প্রকল্প বাস্তবায়নের নিয়ম এমনভাবে তৈরি যে, আসল প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হয়, অথচ সেবার মান বৃদ্ধি পায় না।
তিনি অপচয় কমিয়ে রোগীর সুবিধার জন্য অর্থ ব্যবহার করার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "একটা ফুলের তোড়ায় ১৫০০-১৬০০ টাকা খরচ হয়, অথচ এই টাকায় অন্তত একজন রোগীর ওষুধ কেনা যেত। যেই অপচয়টা আমরা করছি, সেটা যদি আমি আমার রোগীর পেছনে খরচ করতে পারি; তাতেই হবে আসল উন্নয়ন।"
প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার অবহেলা প্রসঙ্গে নূরজাহান বেগম বলেন, বাজেট কমছে এবং মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ক্যান্সার একদিনে হয় না; দীর্ঘ সময় ধরে তামাক, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনযাপনের কারণে এটি তৈরি হয়। স্কুলের শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষা দিলে তারা ঘরে গিয়ে পরিবারের সদস্যদেরও সতর্ক করতে পারত, ফলে রোগ আগেভাগে ধরা পড়ত।
রোগীর দুঃখ ও হাসপাতালের বিশৃঙ্খলার বিষয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, একজন রোগী চিকিৎসার জন্য ২৬ হাজার টাকা খরচ করে, যার বেশিরভাগই ধার করা টাকা। "অনেক রোগী ভর্তি হতে না পেরে তিন দিন বারান্দায় ঘুমায়, কেউ রাস্তায় রাত কাটায়। অন্তত তাদের জন্য কিছু স্থান এবং শৃঙ্খলা থাকা উচিত," তিনি যোগ করেন। এছাড়াও তিনি হাসপাতালের ইনডোরে ডাক্তার ছাড়া অন্যদের প্রবেশ সীমিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার জটিলতার প্রসঙ্গে নূরজাহান বেগম বলেন, "প্রাইভেট সেক্টর ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে সরাসরি যন্ত্রপাতি কিনে আনতে পারে, সরকার কেন পারে না? নতুন নীতিমালা (পিপিআর) আসছে, কিন্তু জটিলতা কমছে না।" তিনি সতর্ক করেছেন, নতুন ধারা যত বেশি যোগ হয়, জনগণ ততই ‘পৃষ্ঠ’ হয়।
তিনি নিশ্চিত করেছেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রকৃত প্রতিবন্ধকতা টাকা নয়, বরং দুর্নীতি ও জটিল প্রশাসনিক ব্যবস্থা। ১৪ কোটি টাকার প্রশ্নটি একক যন্ত্রের নয়, পুরো ব্যবস্থার প্রতীক। তার মতে, অপচয় বন্ধ করে সেই অর্থ রোগীর জন্য ব্যয় করাই আসল উন্নয়ন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।