জাপানে চালক নিয়োগে বাংলাদেশে ড্রাইভিং স্কুল স্থাপনের ঘোষণা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১২:৫৯ এম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
জাপানে দক্ষ চালকের ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশে একটি আধুনিক ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন জাপানের খ্যাতনামা উদ্যোক্তা ও রাজনীতিবিদ মিকি ওয়াতানাবে। দেশের তরুণদের জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ওয়াতানাবে এ পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি জানান, “আমরা ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় ১২ হাজার বর্গমিটার জায়গা খুঁজছি।” জাপানে দক্ষ চালকের ব্যাপক চাহিদা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেই ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঢাকার উপকণ্ঠে উপযুক্ত জায়গা চিহ্নিতের নির্দেশ দেন। এই বৈঠকটি ছিল গত মে মাসে ইউনূসের জাপান সফরের ধারাবাহিকতা, যেখানে জাপানি উদ্যোক্তারা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে চুক্তি করেন।
ওয়াতানাবে জানান, তিনি ইতোমধ্যে নরসিংদীর মনোহরদীতে একটি ভাষা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে অন্তত তিন হাজার বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত করা হবে। তিনি যোগ করেন, “ইতোমধ্যে নির্মাণ ও কৃষি খাতে কাজের জন্য ৫২ জন কর্মী জাপান গেছেন।”
অধ্যাপক ইউনূস প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে জাপানি সংস্কৃতি, শিষ্টাচার ও আচরণ শেখানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি শেখানো প্রশিক্ষণের অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত। এতে বাংলাদেশি কর্মীরা জাপানে যাওয়ার আগে যথাযথভাবে প্রস্তুত হতে পারবে।”
তিনি ওয়াতামি গ্রুপকে সেবা, নার্সিং, নির্মাণ ও কৃষি খাতে প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের আহ্বান জানান, যার জবাবে ওয়াতানাবে বলেন, “আমরাও এগুলো করতে চাই।” তিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নবগঠিত জাপান সেলের প্রশংসা করে বলেন, এটি জাপানি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা সহজ করছে।
ওয়াতানাবে ঢাকা বা আশপাশে আরও একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন, যাতে জাপানি প্রতিনিধিদের মনোহরদী পর্যন্ত যেতে না হয়। প্রধান উপদেষ্টা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন অব্যবহৃত কোনো আইটি পার্ক বা ভবন চিহ্নিত করতে, যা স্বল্প ব্যয়ে ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, “ড্রাইভিং স্কুলের জন্য জমি ও নতুন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের স্থান নির্ধারণে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।” প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম জানান, শিগগিরই জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঢাকার আশপাশের সম্ভাব্য আইটি পার্কগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
অধ্যাপক ইউনূস জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানান, বর্তমানে বছরে মাত্র দু’বার পরীক্ষা হয়, যা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।
বৈঠকে ওয়াতানাবে স্মরণ করেন, এক দশকেরও বেশি আগে গাজীপুরের নারায়ণকূলে অধ্যাপক ইউনূসের দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যালয়ে এখন ১,৫০০ শিক্ষার্থী পড়ছে, যা তাদের সাফল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
বৈঠকে এসডিজি সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।