জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ এ মাসেই, স্বাক্ষরের সুযোগ পরেও থাকছে: আলী রীয়াজ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১১:৫৯ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে চলছে জোর প্রস্তুতি। চলতি মাসের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে স্পষ্ট, নির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সুপারিশ তুলে দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে, সরকার সেই সুপারিশ অনুযায়ী কাজ শুরু করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান নিয়ে অগ্রগতির বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। আলী রীয়াজ জানান, “সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সরকারও ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করবে।” তিনি বলেন, সুপারিশে এমন উপায় থাকবে, যাতে অংশগ্রহণমূলকভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের পথ তৈরি হয়।
আগামীকাল শুক্রবার অনুষ্ঠেয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে এমন দলগুলোর বাইরে কেউ সই না করলেও, ভবিষ্যতে তাতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে বলেও জানান তিনি। “শুক্রবার কোনও দল সনদে সই না করলে, পরেও করতে পারবে,” বলেন আলী রীয়াজ।
এ পর্যন্ত ৮৪টি সংস্কারে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এর ভিত্তিতেই সনদের খসড়া তৈরি হয়েছে, যা শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হবে।” মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রত্যাশা করেন, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতারা শেষ পর্যন্ত অংশ নেবেন।
এদিকে, চারটি বামপন্থী দল আগেই জানিয়েছে তারা সনদে সই করবে না। অন্যদিকে, এনসিপি বলেছে, বাস্তবায়নের নির্দেশনার খসড়া আগে না দেখা পর্যন্ত তারা সই করতে রাজি নয়। এ অবস্থানকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, “বুঝতে পারি, এটি তাদের রাজনৈতিক অবস্থান। তবে আমরা আশাবাদী, তারা শেষ পর্যন্ত বিবেচনায় আসবেন এবং সই করবেন।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীও। তিনি বলেন, “সনদ বাস্তবায়ন করা গেলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির বড় পরিবর্তন হবে।” অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে তুলে ধরা হবে দেশের রাজনীতির অতীত ও বর্তমান, এবং জনগণের জন্য সনদের তাৎপর্য।
ফারুকী আরও বলেন, “সনদ সইয়ের মাধ্যমে আমরা উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে যাত্রা করব। আগামী দুই মাসে দেখানো হবে, এই সনদ কীভাবে মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।”
আলী রীয়াজ জানান, সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় যেসব দল সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই দলিল এক বছরের কাজ নয়। এটি বহুদিন ধরে জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা, রাষ্ট্রীয় সংস্কারের চেষ্টার প্রতিফলন, যা নানা সময় বাধার মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, “সব কিছুর মধ্যেও সবার প্রচেষ্টা আংশিকভাবে হলেও এই সনদে প্রতিফলিত হয়েছে।”
আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে সংসদ এলাকায় ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ থাকবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ।
তিনি আরও বলেন, সনদে স্বাক্ষরের পরপরই সরকারকে বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশ দেওয়া হবে। আশা প্রকাশ করেন, এনসিপিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন।