২৭ হাজার কোটি টাকায় চীন থেকে ২০টি যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ


২৭ হাজার কোটি টাকায় চীন থেকে ২০টি যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সরকার চীনের কাছ থেকে ২০টি জে-১০সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২০ কোটি ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ২৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা। যুদ্ধবিমানগুলো চীনের নিজস্ব বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত জে-১০সি মডেলের রপ্তানি সংস্করণ। এগুলো ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট, যা আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম।

এই চুক্তিটি সরাসরি সরকার-থেকে-সরকার বা জিটুজি পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে হতে পারে এবং তা বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরের মধ্যে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পুরো অর্থ ২০৩৫-৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। প্রতিটি যুদ্ধবিমানের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ৬ কোটি ডলার, যার ফলে ২০টি বিমানের মোট মূল্য দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ, যন্ত্রপাতি পরিবহন এবং অন্যান্য কারিগরি খরচ বাবদ আরও ৮২ কোটি ডলার যুক্ত হবে। পাশাপাশি বীমা, ভ্যাট, কমিশন, নির্মাণ খরচসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় অন্তর্ভুক্ত হলে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২২০ কোটি ডলার।

চুক্তিটি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে গত এপ্রিলে বিমান বাহিনী প্রধানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি প্রস্তাবিত চুক্তিপত্র যাচাই-বাছাই করবে, জিটুজি পদ্ধতিতে কেনা যথাযথ হবে কি না তা বিশ্লেষণ করবে এবং চীনা পক্ষের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে যুদ্ধবিমানের মূল্য, পরিশোধ পদ্ধতি এবং অন্যান্য শর্ত চূড়ান্ত করবে। চুক্তিতে রক্ষণাবেক্ষণ সহায়তা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয় এবং চীন এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে। এরপর পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে উত্তেজনার সময় পাকিস্তান জে-১০সিই ব্যবহার করে ভারতের ফ্রান্স-নির্মিত রাফায়েল যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার দাবি করলে এই বিমান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে, যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। চীনের বাইই অ্যারোবেটিক স্কোয়াড এই বিমান তাদের প্রদর্শনী বহরে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা বিমানটির উচ্চ সক্ষমতা ও দূরপাল্লার অভিযানে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা তুলে ধরে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনেকদিন ধরেই নতুন যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন ছিল এবং তারা পরিকল্পনাও করছিল। তবে তিনি সতর্ক করেন যে, বর্তমান বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, তা বিবেচনায় রেখে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে মোট ২১২টি বিমান রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট। এর মধ্যে চীনা নির্মিত এফ-৭, রুশ মিগ-২৯বি এবং ইয়াক-১৩০ লাইট অ্যাটাক বিমান উল্লেখযোগ্য। এসব পুরোনো মডেলের বিমানের মধ্যে জে-১০সিই যুক্ত হলে বিমান বাহিনীর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং আধুনিকায়নে তা এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×