সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:৪৪ এম, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতরা সাবেক মন্ত্রী ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৫৫ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর গুলশান-২ এ তার নিজ বাসভবনে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে অংশ নেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার।
তিনটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাষ্ট্র বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন ও মানবাধিকার ইস্যুতে দীর্ঘদিনের অংশীদার। সাবের হোসেন চৌধুরী নিজেও পরিবেশমন্ত্রী থাকাকালে এসব দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কূটনীতিকরা বৈঠকে জানতে চান নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে কিনা। একই সঙ্গে দলটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম কীভাবে শুরু করা যেতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়।
সূত্র আরও জানায়, নর্ডিক রাষ্ট্রদূতরা মনে করেন, যদি বর্তমান সরকার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়, তাহলে বিদেশি কূটনীতিকদের আপত্তি থাকবে না। বরং এতে নির্বাচনী মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে বলে তারা মনে করেন।
বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত গোপনীয়। তিন রাষ্ট্রদূত একই গাড়িতে ফ্ল্যাগ ছাড়া সাবের হোসেনের বাসায় প্রবেশ করেন এবং বৈঠক শেষে বিকল্প পথ ব্যবহার করে বের হয়ে যান। সাধারণত কূটনৈতিক সাক্ষাতে এ ধরনের গোপনীয়তা দেখা যায় না, তবে সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটি করা হয়েছে।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকায় দলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিগত ১১ মে সন্ধ্যায় সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় গোপনে বৈঠক করেছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। তখনও জানা গিয়েছিল, বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সে সময় জানায়, “তারা সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যান, যা তাদের দীর্ঘদিনের অনুসরণীয় কূটনৈতিক রীতির অংশ।”
২০২৪ সালের অক্টোবরে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ছয়টি মামলা ছিল। পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হন তিনি। একই সময়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা গ্রেপ্তার হন বা দেশ ত্যাগ করে বিদেশে আশ্রয় নেন।
নর্ডিক রাষ্ট্রগুলো - নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক; উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অংশ হিসেবে বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং পরিবেশ ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে। তাদের উন্নয়ন সহযোগিতাও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে সোমবারের বৈঠকটি এই প্রেক্ষাপটেই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।