কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ২১ কোটি টাকা লোপাট, আসামি সাবেক ভূমিমন্ত্রীসহ ২৫


কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ২১ কোটি টাকা লোপাট, আসামি সাবেক ভূমিমন্ত্রীসহ ২৫

কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) কারওয়ান বাজার শাখা থেকে ২১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী ও ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপ-সহকারী পরিচালক মো. রুবেল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি দুদকের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মামলায় আসামিদের মধ্যে আছেন- সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী ও ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান, আরামিটের জুনিয়র অফিসার মোহাম্মদ মিছবাহুল আলম, হিসাব খোলার পরিচয়দানকারী মোহাম্মদ মামুনুর রশীদসহ ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

আরও আছেন- ইউসিবির সাবেক পরিচালক ইউনুছ আহমদ, আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আখতার মতিন চৌধুরী, এম এ সবুর, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, আসিফুজ্জামান চৌধুরী, রোকসানা জামান চৌধুরী, বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, ও আরামিট পিএলসির এজিএম মো. আব্দুল আজিজ এবং এক্সিকিউটিভ (অ্যাকাউন্টস) মো. ইউসুফ চৌধুরী।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালে সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন আরামিটের এক জুনিয়র অফিসার মোহাম্মদ মিছবাহুল আলম নিজেকে মডেল ট্রেডিংয়ের মালিক হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে জাল ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেন। এরপর ইউসিবির কারওয়ান বাজার শাখায় একটি হিসাব খুলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ৩০ কোটি টাকার ঋণের আবেদন করা হয়, যার মধ্যে ২১ কোটি টাকা অনুমোদন পায়।

এই অর্থ মডেল ট্রেডিং-এর হিসাবে জমা হওয়ার পর তা নগদে উত্তোলন ও বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে পাচার করা হয়। পরে ইউসিবির আরেক গ্রাহকের নামে নেওয়া ২৫ কোটি টাকার ঋণ ঘুরিয়ে এনে ২১ কোটি টাকার দায় পরিশোধ দেখানো হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, শাখা কর্মকর্তারা মিথ্যা পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি করে ওই ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং গুদামে হাজার হাজার মেট্রিক টন স্টক, শত কোটি টাকার পণ্য মজুদের ভুয়া তথ্য দেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং তা বিদেশে পাচার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলা হয়েছে।

এর আগেও ১০৩ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করেছিল দুদক, যেখানে একই ধরনের কৌশলে কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা "দ্য মিনিস্টারস অব মিলিয়নস" শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে সাইফুজ্জামানের বিদেশে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদের তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাজ্যেই তার ৩৬০টি বাড়ি রয়েছে।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, আমিরাতে ২২৮টি ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি বাড়িসহ তার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার ব্যাংক হিসাবে থাকা অর্থ, ১০২ কোটি টাকার শেয়ার এবং ৯৫৭ বিঘা জমিও জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া, ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×