জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে: প্রধান বিচারপতি


জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় যে বড় পরিবর্তন এনেছে, তা আমাদের ন্যায়বিচার প্রদানের অগ্রাধিকার ও পদ্ধতি নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। তাঁর মতে, রাজনৈতিক এই রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে।

রবিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত “ন্যাশনাল কনফারেন্স অন এডিআর: রোল অব ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড কমিটি (ডিএলএসিএস) ইন ইমপ্লিমেন্টিং নিউ লেজিসলেশন” শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) ও ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন (এনএলএএসও)।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ন্যায়বিচারকে সত্যিকারের জনগণকেন্দ্রিক করতে হলে আইনগত সহায়তা ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) বিচারব্যবস্থার মূল ভিত্তিতে স্থান পেতে হবে। দায়িত্ব গ্রহণের সময় ভেবেছিলেন, প্রধান বিচারপতির ভূমিকা হবে মূলত আইনের ব্যাখ্যা ও প্রক্রিয়াগত জটিলতায় সীমাবদ্ধ। কিন্তু জুলাই বিপ্লব সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে। শুরু থেকেই স্পষ্ট হয়েছিল, এই রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার অগ্রাধিকার ও কর্মপদ্ধতিকে আমূল বদলে দেবে।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে গত এক বছরে আইনগত সহায়তা খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনা হয়েছে।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আগস্টের অস্থির সময়কালে প্রথম বড় সংস্কার পদক্ষেপ আসে লিগ্যাল এইড খাতে। শুধু অর্থনৈতিক সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি না করে, বাস্তব পরিস্থিতিগত সীমাবদ্ধতার কারণেও যেন কেউ আইনজীবী ছাড়া আদালতে হাজির না হন, তা নিশ্চিত করতে ‘অর্থনৈতিক সামর্থ্য পরীক্ষা’র পাশাপাশি চালু করা হয়েছে ‘সক্ষমতা পরীক্ষা’।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আইনগত সহায়তা বিচার প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি পুলিশের তদন্ত, প্রসিকিউশন সার্ভিস, সরকারি কৌঁসুলি ও আদালতের সামগ্রিক সক্ষমতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তিনি উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে পেশাদার প্রসিকিউশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটিকে শক্তিশালী করা, এডিআর কার্যক্রম সম্প্রসারণ, সেবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিশ্চিতকরণ এবং বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য মধ্যস্থতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এসব উদ্যোগে জাইকা ও জিআইজেডসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে বৈধতা আসে আস্থা থেকে। বিচার বিভাগও কেবল তখনই আস্থা অর্জন করতে পারবে, যখন এটি হবে স্বাধীন, দক্ষ ও মানবিক। তাঁর ভাষায়, স্বাধীনতা মানে প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা মানে মামলা জট কমাতে আধুনিক প্রক্রিয়া ও এডিআর-এর কার্যকর ব্যবহার, আর মানবিকতা মানে রূপান্তরমূলক আইনগত সহায়তা।

প্রধান বিচারপতি আশা প্রকাশ করেন, বিচার বিভাগ, আইনজীবী সমাজ ও নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে জনগণকেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। তাঁর প্রত্যাশা, এই সম্মেলন হবে সমাপ্তি নয় বরং এক নতুন সূচনা যেখানে এডিআর ও লিগ্যাল এইড বিচারব্যবস্থার মূল কেন্দ্রে থাকবে এবং সংবিধানের অঙ্গীকার “সব নাগরিক আইনের সমান সুরক্ষা পাবেন” বাস্তবে রূপ নেবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আজাদ সুবহানী (জেলা জজ)। সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, ৬৪ জেলার জেলা জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান, ৬৪ জন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৮ জন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ৮ জন মহানগর দায়রা জজ, ৬৪ জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিসহ প্রায় ৩০০ অংশগ্রহণকারী।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×