রোহিঙ্গাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ঢাকায় ‘মার্চ ফর আরাকান’
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:২৮ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২৫

রোহিঙ্গাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঢাকায় ‘মার্চ ফর আরাকান’ শীর্ষক পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে জেন-জি অ্যাক্টিভিস্টরা। সোমবার বিকালে ‘আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ পিপলস কোয়ালিশন ফর রোহিঙ্গা রাইটস’-এর ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই পদযাত্রায় অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য, জুলাই বিপ্লবের অ্যাক্টিভিস্ট ও সাধারণ নাগরিকরা।
বিকেল ৩টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। অংশগ্রহণকারীরা শ্লোগান দেন - “রোহিঙ্গা জাতির ওয়াতান, নাফ থেকে কালাদান”, “ভোরের আলো মুক্তির গান, স্বাধীন হবে আরাকান”, “ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, আরাকান উইল বি ফ্রি”, “রক্তে লেখা এই আহ্বান, মুক্ত হোক আরাকান”।
পরে শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি আহনাফ আলম, অ্যাক্টিভিস্ট ইফতেখার জামিল, রাফিদ এম ভূঁইয়া, মোহাম্মদ ইশরাক হোসাইন, আজিজ ফাহিম, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওহায়েদ ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, সংগঠক জিহাদী ইহসান এবং মুখপাত্র শাহরিয়ার ফাহাদ।
রোহিঙ্গা তরুণ আহনাফ আলম বলেন, “আরাকানে আমাদের পূর্বপুরুষদের শতাব্দীব্যাপী উপস্থিতি থাকার পরও আমাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশে আমাদের ভাইদের মধ্যে অনেকের কাছে ভুল ধারণা ও বিদ্বেষ আছে, যা দূর করা জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশি জনগণ আমাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাবে।”
জিহাদী ইহসান বলেন, “আমাদের বাংলা সালতানাত ও রক্তের সিলসিলার ভাই রোহিঙ্গারা সতের শতক থেকে গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে। তাদের রক্তের কোনো দাম নেই, কারণ তারা দেখতে কালো, চিবুক ভাঙা, চোখের কোঠরে মণি শুকিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হলেও রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “পৃথিবীর সকল দেশে ফিলিস্তিনের জন্য শিল্প-সাহিত্যের মধ্য দিয়ে লড়াই জারি আছে, তাই পৃথিবীর সকল দেশের মুক্তিকামী মানুষের কাছে বার্তা দিচ্ছি আপনার রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরব হন। ঐক্যবদ্ধ মানুষের ঢল যেন সাতশো নদীর ঘ্রাণ নিয়ে ছুটে যায় নাফ নদী থেকে ঝেলাম নদী, ইলি নদী থেকে হোতান নদী, ককেশাস পর্বতের তেরেক নদী থেকে ফোরাত নদী, জর্ডান নদী থেকে নীলনদ পর্যন্ত।”
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গারা আমাদের ভাই। তারা গত কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে। বছরের পর বছর নিজেদের ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে নির্মম জীবন যাপন করছে। অথচ সভ্যতার বুলি আওড়ানো বিশ্বশক্তি ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো সংগঠনগুলো এ বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।”
তিনি বলেন, “একটা জাতিকে বছরের পর বছর গণহত্যার শিকার হতে হচ্ছে, অথচ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং মানবাধিকারের ধ্বজাধারীরা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই নীরবতা মানবতার জন্য লজ্জাজনক।”
তিনি আরও বলেন, “আরাকানকে স্বাধীনতা দেওয়া হোক, রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে মানবতা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানাই, আরাকানের রোহিঙ্গাদের অধিকারের দাবিতে আপনারা সরব হোন, আওয়াজ তুলুন, কারণ ন্যায় ও মানবতার সংগ্রামে নীরবতা কোনো সমাধান নয়।”
সমাবেশে মুখপাত্র শাহরিয়ার ফাহাদ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মুক্তি ও আরাকানের স্বাধীনতার জন্য আট দফা দাবি ঘোষণা করেন:
১. রোহিঙ্গা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. রোহিঙ্গাদের জন্মভূমিতে ফেরার অধিকার এবং তাদের মালিকানাধীন সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে।
৩. রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবাধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিতে হবে।
৪. রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক কাঠামো সক্রিয় করতে হবে, প্রয়োজনে জাতিসংঘের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা আনতে হবে।
৫. রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় কোনো পরাশক্তি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৬. রোহিঙ্গাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিচালনায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, বিদেশি এনজিওর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে।
৮. বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও মুক্তিকামী মানুষদের সমর্থন নিয়ে বৈশ্বিক সংহতি গড়ে তুলতে হবে।