জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়ে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে: আসিফ মাহমুদ


জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়ে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে: আসিফ মাহমুদ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, সরকারকে থামানোর জন্য একাধিক চেষ্টা চালানো হয়েছে। যদিও এক-এগারো প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি, তবুও নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। সে কারণে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এখনো পূর্ণতা পায়নি।

তবে আশার বার্তা দিয়ে তিনি জানান, আগামী ৫ আগস্ট ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্যমতের ভিত্তিতে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেতে চলেছে।

শনিবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ আয়োজিত দিনব্যাপী এক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনায় সজীব ভুঁইয়া বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনই ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রীয় সংযোগ বিন্দু। যদিও এ নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে, আজকের এই আয়োজন আন্দোলনকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন মত ও পক্ষকে একত্রিত করাই ছিল এই আয়োজনের বড় সাফল্য।

অনুষ্ঠানে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, "জুলাই প্রোক্লেমেশন যেন কেবল একটি প্রতীক হয়ে না থাকে, বরং গণভোটের মাধ্যমে একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সমসাময়িক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্পষ্ট, যা নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের জন্য বড় ব্যর্থতা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যদি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে না পারেন, তবে ড. ইউনূসকে অতিমূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না, তা ভাবতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর মন্তব্য করেন, আওয়ামী লীগের মতো একতরফা মুক্তিযুদ্ধের ব্যাখ্যার পুনরাবৃত্তি যেন জুলাই অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও না হয়। এতে জাতিগত বিভাজন তৈরি হবে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ শহীদ পরিবার ও আহতদের হতাশার প্রসঙ্গে বলেন, তাদের দাবি অবহেলা করা যাবে না। তাদের প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে গেলে দায় জামায়াতকেও নিতে হবে।

ছাত্ররাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান বলেন, অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিতে যে বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে, তা একপক্ষীয় দাবি ও আধিপত্য চর্চা থেকেই তৈরি হয়েছে।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান বলেন, এ অভ্যুত্থানে একক নেতৃত্ব ছিল না। বরং এটি ছিল দলমতের বাইরে গিয়ে সম্মিলিত অংশগ্রহণ। কাজেই এখন ‘ক্রেডিট রাজনীতি’ ত্যাগ করতে হবে।

ছাত্রপক্ষের সভাপতি মুহাম্মদ প্রিন্সও একমত পোষণ করে বলেন, অভ্যুত্থানের সফলতা ধরে রাখতে হলে সম্মিলিত চেষ্টার স্বীকৃতি দিতে হবে, না হলে ক্যাম্পাসের বিভাজন কাটানো যাবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ, সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম ও মুখপাত্র সিনথিয়া জাহিন আয়েশার সঞ্চালনায় দিনব্যাপী এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সবার বক্তব্যেই উঠে আসে, ‌‘জুলাই অভ্যুত্থান’ কেবল একক কোনো পক্ষের অর্জন নয়—এটি ছিল বহু মত, পথ ও শ্রেণির সম্মিলিত প্রতিবাদের ফল। সেই ধারাবাহিকতায় ঘোষণা হতে যাওয়া ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

 

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×