ছিনতাইয়ের পর মোহাম্মদপুর থানায় অপমানের শিকার সাংবাদিক


ছিনতাইয়ের পর মোহাম্মদপুর থানায় অপমানের শিকার সাংবাদিক

রাজধানীতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে থানায় গিয়েছিলেন এক সাংবাদিক। অভিযোগ করার বদলে তাকে শুনতে হয় রুঢ় মন্তব্য—'শার্টের বোতাম লাগান।' সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ জানালে পরে নড়েচড়ে বসে পুলিশ।

ছিনতাইয়ের পর অভিযোগ জানাতে গিয়ে পুলিশের অসহযোগিতা ও অবহেলার মুখে পড়েন সাংবাদিক আহমাদ ওয়াদুদ। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এই ঘটনার পর তিনি মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ দিতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) জসীম উদ্দিন তেমন কোনো আগ্রহ দেখাননি। বরং আহত অবস্থায় উপস্থিত আহমাদ ওয়াদুদকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'শার্টের বোতাম লাগান।'

পর্যাপ্ত সহায়তা না পেয়ে আহমাদ ওসি আলী ইফতেখার হাসানের কক্ষে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওসি বলেন, 'আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি। আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!'

পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গিয়ে ছিনতাইকারীদের দেখিয়ে দিলেও কাউকে আটক করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আহমাদ।

এই পুরো ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন বণিক বার্তার সহসম্পাদক আহমাদ ওয়াদুদ। পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এরপর শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছিনতাইয়ে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোনও উদ্ধার হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের নাম ইউসুফ, সিয়াম ও জহুরুল। এদের বিরুদ্ধে মামলাও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান। তিনি বলেন, 'বিষয়টি নজরে আসার পরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে চারজনকে মোহাম্মদপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে আমার কার্যালয়ে সংযুক্ত করেছি। এ ছাড়া তেজগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আলমগীর কবিরকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

থানা থেকে প্রত্যাহার করা চার পুলিশ সদস্য হলেন—এসআই জসীম উদ্দিন, এএসআই আনারুল, কনস্টেবল মাজেদুর রহমান ও মো. নুরুন্নবী।

ঘটনার বিস্তারিত আহমাদ ওয়াদুদ ফেসবুকে তুলে ধরেন বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। সেখানে তিনি লেখেন, 'আজ রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরে আমার সঙ্গে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা আমার একটি মোবাইল ফোন, কিছু টাকাপয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়।' তিনি জানান, ঘটনার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তিনি ও তাঁর স্ত্রী থানায় পৌঁছান।

ডিউটি অফিসারের কক্ষে গিয়ে তিনি অভিযোগ জানালে তাদের বলা হয়, 'একটু অপেক্ষা করেন, দেখছি।' কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তিনি নিজেই অভিযোগপত্র লিখতে রাজি হন। তখন তাঁকে কাগজ দিলেও কলম দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত তার স্ত্রী ব্যাগ থেকে কলম বের করে দেন, সেই কলমেই তিনি অভিযোগ লেখেন।

অভিযোগের কপি না দিয়ে একটি ফোন নম্বর ধরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে, বলা হয় এটি এএসআই আনারুলের নম্বর, তিনি নবোদয় হাউজিংয়ে ব্যস্ত আছেন। সেখানে গিয়ে ছিনতাইকারীদের দেখা যেতে পারে এমন অনুরোধ করলে এসআই জসীম বিরক্ত হয়ে বলেন, 'এটি সম্ভব নয়। ওই এলাকায় উনি ছাড়া আর কেউ যেতে পারবেন না। এটি তার এলাকা। আপনি এখান থেকে এখন চলে যান।'

এমনকি আহমাদের ধারণা ছিল ছিনতাইকারীরা এখনো কাছাকাছি আছে। কিন্তু এসআই জসীম উত্তরে বলেন, 'আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার-আমার জন্য বসে থাকবে নাকি?'

ওসির পরামর্শে পরে ওই এলাকায় পৌঁছান একদল পুলিশ সদস্য। প্রায় ৪০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি জায়গা ঘুরে ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করেন আহমাদ ওয়াদুদ। কিন্তু অভিযুক্তদের ধরতে আগ্রহ দেখাননি দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য এএসআই আনারুল। তিনি দূর থেকে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসেন। আবার দেখিয়ে দেওয়ার পরও তিনি বলেননি কিছু, বরং দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আহমাদ লেখেন, 'ওরা চলে যাওয়ার পর আনারুল আমাকে বলেন, এখন তো ওদের পাওয়া যাবে না। আমরা গভীর রাতে এসে এখানে অভিযান চালাব। আপনারা এখন বাসায় চলে যান।'

এই বিষয়ে ওসি আলী ইফতেখার হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ফেসবুকে দেওয়া ভুক্তভোগীর বক্তব্য “মনগড়া” এবং তিনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×