বরাদ্দের ৭০ শতাংশ বেশি দরে নতুন চুক্তি, মেট্রোরেলের কাজ  শুরু


February 4 2025/rail dw.jpg

মেট্রোরেল লাইন-৬ এর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশে চলতি বছরের ডিসেম্বরে যাত্রী পরিবহন করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে সেই বাধা কাটিয়ে নতুন করে আবার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। বরাদ্দকৃত মূল্যের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি দরে নতুন চুক্তি করেছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, ডলার উন্মুক্ত করা, কাঁচামাল সরবরাহে জটিলতা, পরিবহন খচর—সব মিলিয়ে নির্ধারিত বরাদ্দে কাজ করতে রাজি হচ্ছিলেন না পুরোনো ঠিকাদার। তাই পুরোনো দরে নতুন চুক্তি করা যাচ্ছিল না। এখন বরাদ্দকৃত মূল্যের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি দরে নতুন চুক্তি করেছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) ‘ইলেকট্রোমেকানিক্যাল’ খাতে ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল); কিন্তু কাজ দেওয়া হয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকায়। যদিও দরপত্রে শুরুতে ঠিকাদারের চাওয়া ছিল প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা।

মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ দুই ভাগে চলছে। একটি অবকাঠামোভিত্তিক। অন্যটি কারিগরি। অবকাঠামোর কাজে তেমন সমস্যা না হলেও আটকে ছিল কারিগরি কাজ। যেমন, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, লিফট, এক্সেলেটর, ট্রেনের দরজার সঙ্গে মিলিয়ে দরজা খোলার গেট, মনিটর, সিসিটিভি, সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন যোগাযোগ স্থাপনের কাজ। প্রকৌশলের ভাষায় পুরো বিষয়টিকে এক শব্দে ‘ইলেকট্রোমেকানিক্যাল’ বলা হয়।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, কাজের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে যে যা কাজ করছে, সেই প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই বর্ধিত অংশের কাজ করাতে হচ্ছে, তা না হলে নতুন ঠিকাদার কাজে মিল করতে পারবেন না। আবার নতুন ঠিকাদারের জন্য ফের দরপত্র আহ্বান করতে হবে। এতে কাজে আরও দেরি হবে।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘শুরুতে রিভিউ করতে বলেছিলাম। পরে জাইকার চুক্তির কারণে তাদের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। তবে কোম্পানি যেটা কোট করেছিল, সেখান থেকে আলোচনা করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে।’

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, বর্ধিত অংশের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের সুযোগ ছিল না। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে যে প্রতিষ্ঠান যেসব কাজ করেছে, তাদের সঙ্গেই বর্ধিত অংশের জন্য নতুন করে চুক্তি করা হয়; কিন্তু বরাদ্দের দ্বিগুণ খরচ চাওয়ায় উচ্চপদস্থদের অনুমতি ছাড়া এটি অনুমোদন করা যায়নি। এতে কাজ আটকে গেছে।

এদিকে মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। অর্থায়নের চুক্তি অনুযায়ী, ঠিকাদার নির্ধারণে জাইকা ভূমিকা রাখবে। নতুন ঠিকাদার থেকে দর পেতে আবার উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে হতো। পুরো প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। তা ছাড়া নতুন দরপত্র কাজের জন্য খরচ কম প্রস্তাব করা হবে কি না, সেটি নিয়েও প্রশ্ন ছিল।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া কালবেলাকে বলেন, ‘কাজ দেরি হলে আর্থিকভাবে সরকার রাজস্ব হারাবে। আমাদের হিসাবে বছরে অন্তত ১২৬ কোটি টাকা হারাতে হবে। এখন দিনে যাত্রী প্রতি গড়ে ৪৬ টাকা পাওয়া যায়। কমলাপুর পৌঁছানো মানেই যাত্রীদের কাছ থেকে এ পরিমাণ ভাড়া বাবদ টাকা পাওয়া।’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু বাজার উন্মুখ হওয়ার ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। মেট্রোরেলের সরঞ্জাম কিনতে হবে ডলারে। তাই আগের থেকে টাকা এখন বেশি লাগবে। আবার অল্প সংখ্যক পণ্য দিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ কম। পণ্যের পরিমাণ কম হওয়ায় পরিবহনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে পণ্যের বাজারদর বেড়েছে। এসব কারণে দরপত্রে বেশি খরচ চেয়েছেন ঠিকাদার।

ঠিকাদারের প্রস্তাবে ডিএমটিসিএলের সম্মতি ছিল। তাই গত ২২ এপ্রিলের বোর্ড সভার সপ্তাহ দুয়েক আগে ডিএমটিসিএলের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৈঠক করে। দরপত্র মেনে নেওয়ার বিষয়টি উপদেষ্টাকে বোঝানো হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বৈঠক সূত্র বলছে, বর্তমান ঠিকাদারের বাইরে গিয়ে অন্য কোনো ঠিকাদারের সঙ্গে কাজ করতে গেলে নির্মাণের সময় আরও বেড়ে যাবে, বৈঠকে এমন আশঙ্কার কথাও তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ক্ষতি, রাজস্ব হারানোর বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×