কোরআন তিলাওয়াতকারীর বিশেষ ১০ মর্যাদা


কোরআন তিলাওয়াতকারীর বিশেষ ১০ মর্যাদা

পবিত্র কোরআন শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং একজন মুমিনের জীবনে এটি এক আলোকবর্তিকা, যা তার হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয় এবং তার জীবনযাপনেও প্রভাব ফেলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ উত্তম বাণীসংবলিত এক কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যা পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বারবার আবৃত্তিযোগ্য। যাদের অন্তরে তাদের প্রতিপালকের ভয় রয়েছে, তারা এর প্রভাবে শিহরিত হয়, এরপর তাদের হৃদয় ও দেহ আল্লাহর স্মরণে নম্র হয়ে পড়ে।’ (সুরা: ঝুমার, আয়াত: ২৩)

নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত শুধু আত্মিক প্রশান্তি এনে দেয় না, বরং একজন পাঠককে দুনিয়া ও আখিরাতে অসংখ্য মর্যাদায় ভূষিত করে। ইসলামের নির্ভরযোগ্য হাদিসসমূহে কোরআন পাঠকারীর বিশেষ দশটি ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথমত, কোরআন শেখা এবং তা অন্যকে শেখানোকে রাসুলুল্লাহ (সা.) শ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শিখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (বুখারি, হাদিস: ৫০২৭)

দ্বিতীয়ত, কোরআন তিলাওয়াতকারী একজন প্রকৃত মুমিন অন্য মুমিনের তুলনায় অনেক বেশি মর্যাদাবান। আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে মুমিন কোরআন তিলাওয়াত করে, সে হলো উত্রুজ্জা ফলের মতো। এটি সুগন্ধি এবং সুস্বাদু। আর যে তিলাওয়াত করে না, সে খেজুরের মতো; স্বাদে ভালো কিন্তু ঘ্রাণহীন।’ মুনাফিকদের ক্ষেত্রেও ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণ দিয়ে রাসুল (সা.) এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৪২৭)

তৃতীয়ত, একজন কোরআনের জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি পৃথিবীতেই উচ্চ সম্মান লাভ করে। নাফে বিন আব্দুল হারিস (রা.)-এর ঘটনা তার প্রমাণ। উমর (রা.) মক্কা ও তায়েফ অঞ্চলের শাসক নিযুক্ত করেছিলেন নাফেকে। তিনি যখন ইবনু আবজাকে প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দিলেন, উমর (রা.) অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি একজন মুক্ত ক্রীতদাসকে দায়িত্ব দিয়েছ?’ জবাবে নাফে বলেন, ‘তিনি কোরআনের জ্ঞানী, ফারায়েজ ও বিচারবিভাগে পারদর্শী।’ তখন উমর (রা.) স্মরণ করিয়ে দেন, ‘এই কিতাবের অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ অনেক জাতিকে মর্যাদায় উন্নীত করেন এবং কোরআন পরিত্যাগকারীদের অবনত করেন।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ২১৮)

চতুর্থত, কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী ব্যক্তি আসমান ও জমিনে উচ্চ মর্যাদা লাভ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি কোরআনের তিলাওয়াতকে অপরিহার্য করে নাও, এটি তোমার জন্য পৃথিবীতে আলো এবং আকাশে ধনভাণ্ডারস্বরূপ।’ (সহিহ ইবনু হিব্বান, হাদিস: ৩৬১)

পঞ্চমত, নিয়মিত কোরআন পাঠ গাফেলদের তালিকা থেকে মুক্তি দেয়। আবু হুরায়রা (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, ‘…যে ব্যক্তি রাতে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করবে, তার নাম গাফেলদের তালিকায় লেখা হবে না।’ (সহিহ ইবনু খুজায়মাহ, হাদিস: ১১৪২)

ষষ্ঠ মর্যাদা হলো, তিলাওয়াতের মাধ্যমে পাপ ক্ষমা হয় এবং আল্লাহ পাপকে নেকিতে রূপান্তর করেন। মুসনাদ আহমাদের একটি হাদিসে বর্ণিত, ‘যখন কোনো জনসমষ্টি আল্লাহকে স্মরণের উদ্দেশ্যে একত্র হয়, তারপর ছত্রভঙ্গ হয়, তখন তাদের বলা হয়, “তোমরা পাপমুক্ত অবস্থায় দাঁড়াও, তোমাদের পাপ নেকিতে রূপান্তর করা হয়েছে।”’ (হাদিস: ১২৪৭৬)

সপ্তমত, কোরআন তিলাওয়াত ঈমানি আলো জাগিয়ে তোলে। জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করলে আল্লাহ পরবর্তী জুমা পর্যন্ত ওই ব্যক্তি ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করে, তার ঈমানি জ্যোতির বিকিরণ থাকবে এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত।’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস: ৩৩৯২)

অষ্টমত, কোরআনের ধারক ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত থাকবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা কোরআন পাঠ করো। বাড়িতে রাখা কোরআন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে। আল্লাহ সেই অন্তরকে শাস্তি দেন না, যা কোরআনের সংরক্ষক।’ (দারেমি, হাদিস: ৩৩১৯)

নবম মর্যাদা হলো, দক্ষ পাঠক জান্নাতে সম্মানিত ফেরেশতাদের মর্যাদা পাবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দক্ষ তিলাওয়াতকারী পুণ্যবান লিপিকার ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবেন। আর যে ব্যক্তি কষ্টসহ তিলাওয়াত করে, তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস: ৪৯৩৭)

দশম ও সর্বশেষ ফজিলত হলো, জান্নাতে সর্বোচ্চ স্থানে বসবাসের সুযোগ। কোরআনের যতটুকু আয়াত মুখস্থ থাকবে, সেই অনুযায়ী জান্নাতে তার স্থান নির্ধারিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাকে বলা হবে, কোরআন পড়ো এবং ওপরে উঠতে থাকো। দুনিয়ায় যেমন ধীরে পড়তে, তেমনিভাবে পড়ো। কারণ তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতই তোমার জান্নাতের অবস্থান নির্ধারণ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৬৪; তিরমিজি, হাদিস: ২৯১৪)

পবিত্র কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক যত দৃঢ় হবে, ততই একজন মুসলিমের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান, মর্যাদা ও ক্ষমার দরজা খুলে যাবে। কোরআনের তিলাওয়াত কেবল ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি একজন মুমিনের আধ্যাত্মিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×