জুমা মানেই রহমতের দিন: জেনে নিন কেন জুমা সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন
- ইসলাম ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:২১ এম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলামে সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ দিন হচ্ছে জুমা। এ দিনকে বলা হয় "সপ্তাহের ঈদ", যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। জুমার দিনে মুসলিমদের মধ্যে আত্মশুদ্ধির অনুভূতি জাগ্রত হয়, ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং সমাজে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য চিত্র ফুটে ওঠে।
কুরআন ও হাদীস, উভয় উৎসেই এই দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত বারবার তুলে ধরা হয়েছে, যা একে অন্য যেকোনো দিনের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব দান করে।
কুরআনের আলোকে জুমার তাৎপর্য
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কুরআনের সূরা জুমু’আয় ইরশাদ করেন: "হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনের নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।” - (সূরা জুমু’আ: ৯)
এই আয়াত থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, জুমার দিন শুধুমাত্র একটি সাধারণ দিন নয় বরং এটি একটি বিশেষ ইবাদতের দিন। এটি আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করার, পার্থিব ব্যস্ততা ত্যাগ করে আত্মশুদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করার এক অনন্য সুযোগ। আল্লাহ নিজেই এই দিনে ইবাদতের প্রতি আহ্বান করেছেন এবং তা মানব জাতির জন্য উত্তম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
হাদীসের আলোকে জুমার মর্যাদা
নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: "সপ্তাহের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে শুক্রবার। এই দিনেই আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করা হয়, জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়।” - (সহীহ মুসলিম)
অন্য একটি হাদীসে উল্লেখ রয়েছে: "জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করেন; যদি না সে হারাম কিছু চায়।” - (সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম)
এই হাদীস দুটি থেকে বোঝা যায় যে, জুমার দিন শুধুমাত্র অতীতের এক স্মরণীয় দিনই নয়, বরং এটি বর্তমানেও একটি কল্যাণ ও রহমতের উৎস। এমনকি এদিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যা 'ঘণ্টার চেয়েও ক্ষণস্থায়ী', যেখানে দোয়া কবুল হয়ে থাকে; যা প্রতিটি মু’মিনের জন্য অত্যন্ত বড় নেয়ামত।
জুমার দিনের সুন্নাত ও আমল
এই দিনের ইবাদত ও আমলের মাধ্যমেও জুমার গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়। হাদীস অনুযায়ী, জুমার দিনে গোসল করা সুন্নাত, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা, আতর ব্যবহার করা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে যাওয়া, খুতবার সময় সম্পূর্ণ নীরব থাকা, এবং অধিক পরিমাণে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ।
তাছাড়া, সূরা কাহফ তিলাওয়াত করাও জুমার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, যার ফজিলত হিসেবে বলা হয়েছে: যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ পাঠ করে, তার এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত এক নূরের আভা সৃষ্টি হয় এবং তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
জুমার সামাজিক গুরুত্ব
জুমার দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সমাজে মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সংহতির চর্চা। এই দিনে মসজিদে একত্রিত হয়ে মুসলিমরা শুধু নামাজ আদায় করেন না, বরং তারা একে অপরের খোঁজ-খবর নেন, মিলেমিশে থাকেন এবং একটি উম্মাহর বন্ধনে আবদ্ধ হন। খুতবা শোনার মাধ্যমে তারা দুনিয়ার ও আখিরাতের কল্যাণমূলক পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবগত হন।
এই দিকগুলো বিবেচনায় নিলে বলা যায়, জুমা হচ্ছে শুধু ইবাদতের নয়, বরং সমাজিক সচেতনতা ও আত্মিক বিকাশের দিন। এটি একদিকে যেমন মুসলিম ব্যক্তির আত্মার পবিত্রতা আনে, অন্যদিকে সমাজে ঐক্য, সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে।
তাই প্রতিটি মু’মিনের উচিত জুমার দিনের মর্যাদা উপলব্ধি করা এবং তা যথাযথভাবে পালন করা, যেন এ দিনটি তার জন্য পরকালে মুক্তির এক উপলক্ষ হয়ে ওঠে।