মহানবী (সা.) জন্ম রাতের রহস্যময় অলৌকিক ঘটনা


মহানবী (সা.) জন্ম রাতের রহস্যময় অলৌকিক ঘটনা

মানব ইতিহাসের এক অলৌকিক অধ্যায় হলো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জন্ম, যা শুধু আরবের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয় বরং বিশ্বব্যাপী ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

জন্মের সময় ও স্থান

ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, নবীজির জন্ম মক্কায় যা সে সময় আরবের ধর্মীয় ও বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বর্ণনা অনুসারে, তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে (৫৩ হিজরিপূর্বে) রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। তবে কিছু সূত্রে ২, ৮, ১০ কিংবা ১৭ রবিউল আউয়ালের কথাও উল্লেখ আছে।

ইবনে কাসিরের তথ্যমতে, সোমবারই নবীজির জীবনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, নবুয়ত লাভ করেন, হিজরত করেন, মদিনায় পৌঁছান এবং একই দিনে ইন্তেকালও করেন। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন এটি সেই দিন, যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

পারিবারিক প্রেক্ষাপট

মহানবী (সা.) কুরাইশ গোত্রের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব নবীজির জন্মের আগেই মদিনায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে জন্মের মুহূর্ত থেকেই তিনি এতিম হিসেবে পরিচিত হন।

জন্মের অলৌকিক ঘটনা

হাদিস ও ঐতিহাসিক গ্রন্থে নবীজির জন্মের সঙ্গে যুক্ত একাধিক অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁর মা আমিনা বিনতে ওয়াহাব জানান, গর্ভধারণকালে তিনি এক নূরের ঝলক দেখেন, যা শাম পর্যন্ত আলোকিত করেছিল। জন্মের সময়ও সেই নূর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

কিছু বর্ণনায় বলা হয়, নবীজির জন্মরাতে মক্কার প্রতিমাগুলো ভেঙে পড়ে এবং পারস্যের অগ্নিকুণ্ড যা হাজার বছর ধরে প্রজ্জ্বলিত ছিল নিভে যায়। একই রাতে তারাগুলো এত নিচে নেমে আসে যে মনে হয়েছিল, সেগুলো পৃথিবীতে পড়বে। অন্য একটি বর্ণনায় উল্লেখ আছে, তিনি জন্মের পর হাতের ভর দিয়ে বসে আকাশের দিকে তাকান।

নামকরণ ও তাৎপর্য

 জন্মের পর দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁকে কাবায় নিয়ে দোয়া করেন এবং নাম রাখেন মুহাম্মদ যার অর্থ প্রশংসিত। এই নাম ইঙ্গিত দেয়, তিনি আসমান ও জমিন উভয় জায়গায় প্রশংসিত হবেন।

এক নতুন যুগের সূচনা

নবীজির জন্ম শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয় বরং এটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিপ্লবের সূচক। জন্মের সময়কার অলৌকিক ঘটনা পৃথিবীর ধর্মীয় কাঠামোয় এক নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত বহন করে। ইবনে কাসিরের মতে, এসব অলৌকিক ঘটনা নবুয়তের সত্যতার প্রমাণ।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর আগমন মানবজাতির জন্য এক নতুন অধ্যায় খুলে দেয়, যা যুগ যুগ ধরে আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা ও মানবকল্যাণের প্রতীক হয়ে আছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×