
স্নায়ুযুদ্ধের উত্তাল সময়ে ১৯৬৫ সালে এক গোপন অভিযান চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। হিমালয়ের নন্দা দেবী পর্বতে এই অভিযান পরিচালনার লক্ষ্য ছিল চীনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ওপর নজরদারি। তবে এই অভিযান এক রহস্যময় বিপর্যয়ের মধ্যে পরিণত হয়। প্লুটোনিয়ামচালিত একটি পরমাণুবিদ্যুৎ যন্ত্র সেখানে হারিয়ে যায়, যা আজও উদ্ধার হয়নি। খবর এনডিটিভি থেকে পাওয়া গেছে।
সেই সময় চীন সদ্য পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিল। এই পরিস্থিতিতে সিআইএ সিদ্ধান্ত নেয় ভারত-চীন সীমান্তবর্তী হিমালয়ের উচ্চশৃঙ্গে একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত অ্যান্টেনা বসানোর। এতে ব্যবহার করা হয়েছিল ১৩ কেজি ওজনের ‘স্ন্যাপ-১৯সি’ নামের জেনারেটর, যার ভিতরে বিপজ্জনক পরিমাণে প্লুটোনিয়াম রাখা ছিল। এর পরিমাণ নাগাসাকিতে ব্যবহৃত পারমাণবিক বোমার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
এই গোপন অভিযানে অংশ নেন মার্কিন ও ভারতীয় পর্বতারোহীরা। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন এম এস কোহলি। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অভিযান চলাকালীন একটি ভয়াবহ তুষারঝড় দেখা দেয়। নিরাপদে নামার জন্য পর্বতারোহীরা ক্যাম্প ফোরের কাছে বরফাচ্ছাদিত এক খাঁজে যন্ত্রপাতি লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হন।
পরবর্তী বছর উদ্ধার অভিযান চালানো হলেও ততক্ষণে যন্ত্রটি নিখোঁজ হয়ে গেছে। ধারণা করা হয়, প্রবল তুষারধসে যন্ত্রসহ পুরো বরফখণ্ড নেমে গেছে। বিকিরণ শনাক্তকরণ যন্ত্র এবং ইনফ্রারেড সেন্সর ব্যবহার করেও প্লুটোনিয়াম ডিভাইসের কোনো নিখোঁজ পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন রাখা হলেও ১৯৭৮ সালে সাংবাদিক হাওয়ার্ড কোহনের অনুসন্ধানে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এরপর ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ তোলে যে, এই যন্ত্র গঙ্গা নদীর উৎসকে দূষিত করতে পারে, যা কোটি কোটি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। হিমালয়ের উঁচু শৃঙ্গ থেকে উদ্ভূত গঙ্গা নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে পদ্মা নামে পরিচিত।
ঘটনাটিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সরকার সচরাচর প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই নীরবে বিষয়টি সামলেছেন।
আজ, ছয় দশক পরও হিমালয়ের কোনো অগভীর বরফখণ্ডের তলায় হয়ত অক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে সেই পারমাণবিক যন্ত্র। এটি ইতিহাসের এক অন্ধকার, বিপজ্জনক এবং অনুশোচনাময় অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে।