
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ২ হাজার ৪৬০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ও সম্পদ অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্রিজ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত শুক্রবার ব্রাসেলসে ইইউ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইইউ কর্মকর্তারা জানান, স্থগিত রাখা এই অর্থ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠন এবং রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদারে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি ২০২৬ ও ২০২৭ সালে ইউক্রেনের জাতীয় বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবেও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই দুই বছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে ফ্রিজ করা অর্থ থেকে মোট ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ঋণ হিসেবে ইউক্রেনকে দেওয়া হবে।
তবে এ সহায়তার সঙ্গে একটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। রাশিয়া যদি ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে যুদ্ধক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়, সে ক্ষেত্রে ইউক্রেনও কিস্তিতে ওই অর্থ রাশিয়াকে পরিশোধ করবে।
ইইউ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে এটি ইইউর সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। ২০২২ সালে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ ও সম্পদ জব্দ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইইউ। এতদিন প্রতি ছয় মাস অন্তর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ নবায়ন করা হতো। তবে শুক্রবারের সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে আর নিয়মিত মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
ইইউর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া এসভিরিদেঙ্কো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার বিবেচনায় এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত। ইইউ’র এ সিদ্ধান্ত ক্ষতিপূরণ ঋণ ব্যবস্থার ভিত্তিকে শক্তিশালী করবে এবং রুশ বাহিনী কী পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ আমাদের দেশে চালিয়েছে, তা রাশিয়াকে অনুভব করাবে।”
এদিকে বৈঠক শেষে ইইউর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ডেনমার্কের অর্থমন্ত্রী স্টেফানি লোস সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে তার আশা, ১৮ ডিসেম্বরের বৈঠকে সেগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে, ইইউর সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অভিযোগ করে বলেছে, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার অর্থ-সম্পদ চুরির নতুন উপায় বের করেছে।”
সূত্র: রয়টার্স