পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরুর ঘোষণা ট্রাম্পের, ইরানের তীব্র নিন্দা


পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরুর ঘোষণা ট্রাম্পের, ইরানের তীব্র নিন্দা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এলোপাথাড়ি ঘোষণা দিয়েছেন; প্রায় তিন দশক পর আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার পথে হাঁটছে দেশটি। এই ঘোষণা ঘিরে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইরান।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতঘিরে এক্স-পোস্টে দেওয়া এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ ও ‘দায়িত্ববোধহীন’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “‘প্রতিরক্ষা বিভাগ’কে ‘যুদ্ধ বিভাগ’ হিসেবে পুনঃনামকরণ করে একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী গোষ্ঠী আবারও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করছে।”
আরাঘচি আরও জানান, “একই দাঙ্গাবাজ (যুক্তরাষ্ট্র) ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে দানবীয় করে তুলছে এবং আমাদের সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আরও হামলার হুমকি দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।”

এদিকে ট্রাম্প ঘোষণা দেন পেন্টাগনকে অবিলম্বে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন রাশিয়া ও চীন-এর মতো অন্য দেশের সঙ্গে সমান হারে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা পুনরায় চালু করা হয়; এটি তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-র সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ঘোষণা করেছেন।

পারমাণবিক নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্লেষক এবং কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর সিনিয়র ফেলো অঙ্কিত পান্ডা বলেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত সম্ভবত রাশিয়া ও চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া। তবে তিনি দাবি করেন, এটি ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বিরোধের সরাসরি ফল নয়।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সপ্তাহে ঘোষণা করেছেন মস্কো তাদের পারমাণবিক চালিত সুপার টর্পেডো “পোসেইডন” পরীক্ষা করেছে। এছাড়া এ মাসের শুরুতেই দেশটি নতুন পারমাণবিক-চালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র “বুরেভেস্টনিক” পরীক্ষা করেছে। অন্যদিকে চীন সেপ্টেম্বরে সামরিক কুচকাওয়াজে “ডংফেং‑৫” আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো নতুন ও উন্নত পারমাণবিক সক্ষমতা প্রদর্শন করেন।

তবে জাতিসংঘ বলছে, রাশিয়া বা চীন কয়েক দশক ধরেই ভূমির ওপরে, ভূগর্ভস্থ বা পানির নিচে কোনো পারমাণবিক বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষা চালায়নি। ১৯৯৬ সালে বদ্য়াপক পারমাণবিক পরীক্ষা-নিষেধ চুক্তির (Comprehensive Nuclear‑Test‑Ban Treaty) অধীনে পরীক্ষাগুলো নিষিদ্ধ আছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইরান চুক্তিতে সই করেছে, কিন্তু অনুমোদন দেয়নি; রাশিয়া ২০২৩ সালে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়।

বিশ্লেষক ট্রেভর ফাইনডেল (মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ফেলো) অ্যাল জাজিরাকে বলেছেন, “ট্রাম্প তাঁর পোস্টে কী ধরনের পরীক্ষা বলছেন, তা স্পষ্ট নয়।” তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমার ধারণা, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের কথা বলছেন; যেমনটি উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া প্রকাশ্যে করে আসছে। এগুলো প্রকৃত পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করে না (তবে সম্ভবত একটি ডামি) এবং এগুলো পারমাণবিক বিস্ফোরণও তৈরি করে না।” ফাইনডেল আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই সময়ক্রমে নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে আসছে, উন্নয়নশীল ও বিদ্যমান উভয় ধরণের। প্রশান্ত মহাসাগরে এগুলো প্রভাব ছড়ায়, তবে তারা সাধারণত বড় ঘোষণা করে না, উত্তর কোরিয়া বা রাশিয়ার মতো করে বিষয়টিকে প্রবলভাবে তুলে ধরে না।

এদিকে ট্রাম্প একবার আরও বলেন, তিনি চান ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি “সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেওয়া” হোক এবং তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন না করুক। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছিল।

কার্নেগি এনডাউমেন্টের পান্ডা জানিয়েছেন, তেহরান দীর্ঘদিন বলছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুই সিভিলিয়ান উদ্দেশ্যে পরিচালিত এবং তারা এখনো কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। বুধবার (২৯ অক্টোবর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বক্তব্য দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না এবং পূর্বেও করেনি। তিনি জানিয়েছেন, “২০১৯ সাল থেকে আমরা অবশ্যই রাজনৈতিক উন্নয়নের কারণে ইরান ও আইএইএর মধ্যে ওঠাপড়ার মুখোমুখি হয়েছি। তবুও তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি পালনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×