নেতানিয়াহুর নির্দেশে ফের গাজায় বোমা বর্ষণে নিহত অন্তত ২০
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৩১ এম, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
গাজায় আবারও বেড়ে উঠেছে সহিংসতার আগুন। দক্ষিণ রাফায় গুলি বিনিময়ের পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে পরিচালিত তীব্র বোমা হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় একজন ইসরায়েলি সেনাও আহত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। বিশ্লেষকদের মতে, ১০ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।
হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা নিখোঁজ বন্দীদের মৃতদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। সংগঠনটি সতর্ক করে জানায়, এই হামলা মৃতদেহ অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত করবে এবং গাজায় অবশিষ্ট ১৩ বন্দীর দেহ উদ্ধারে বিলম্ব ঘটাবে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর গাজার সাবরা এলাকায় এক আবাসিক ভবনে হামলায় চারজন এবং দক্ষিণ খান ইউনিসে আরও পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আল-শিফা হাসপাতালের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের পর হাসপাতালের রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এত জোরালো ছিল যে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও তা শোনা যায়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, সৈন্যদের ওপর হামলার জবাবে হামাসকে "বড় মূল্য দিতে হবে"। অন্যদিকে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, এই অভিযানের আগে তেল আবিব আগামভাবে ওয়াশিংটনকে অবহিত করেছিল।
গাজার সরকারি তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি মানবিক সহায়তার প্রবাহও কঠোরভাবে সীমিত করে রাখা হয়েছে।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলমান বিমান হামলা যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন। সংগঠনটি চুক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
গাজার হামাস নেতা সুহাইল আল-হিন্দি বলেন, “আমরা যতটা সম্ভব মৃতদেহ উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রতিটি বিলম্বের জন্য সম্পূর্ণ দায় ইসরায়েলের।”
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের গবেষক মুহাম্মদ শেহাদা বিশ্লেষণ করে বলেন, “নেতানিয়াহু গাজায় নতুন করে গণহত্যার জন্য যুক্তি তৈরি করতে চাইছেন।” তবে ইসরায়েলি বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও আঞ্চলিক মিত্রদের গভীর সম্পৃক্ততার কারণে যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম।
কাতার থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশটির অনুমোদন ছাড়া ইসরায়েল বড় কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশ্লেষকদের ধারণা, ইসরায়েল এখন এমন এক ধরনের যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে চায়, যেখানে তারা নিজেদের শর্তে হামলা চালাতে পারবে এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে পারবে।