যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় তীব্র ক্ষুধা সংকট: ডব্লিউএইচও
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:৫৮ এম, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও সেখানে ক্ষুধা ও অপুষ্টির ভয়াবহতা এখনো কমেনি; এমন সতর্কতা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার মতে, ইসরায়েল মানবিক সহায়তা প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় খাদ্য ও জরুরি ত্রাণসামগ্রী পর্যাপ্তভাবে পৌঁছাতে পারছে না। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, অবরুদ্ধ গাজায় যে পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী প্রবেশ করছে, তা জনসংখ্যার ন্যূনতম পুষ্টি চাহিদাও পূরণে ব্যর্থ। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, তাদের প্রতিদিন দুই হাজার টন ত্রাণ পাঠানোর লক্ষ্য থাকলেও বর্তমানে সেই পরিমাণের কাছাকাছিও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, কারণ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রবেশের জন্য মাত্র দুটি রুট খোলা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, “পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত ভয়াবহ। যা পরিমাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশ করছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। যথেষ্ট খাদ্য না পাওয়ায় ক্ষুধার সংকটের কোনো উন্নতি হয়নি।”
এর আগে বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার প্রায় এক-চতুর্থাংশ জনগণ বর্তমানে অনাহারে ভুগছেন। তাদের মধ্যে ১১ হাজার ৫০০ জন গর্ভবতী নারী। সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, এই চলমান খাদ্য সংকট “পুরো এক প্রজন্মের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।”
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপ–নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবারটন বলেন, গাজায় এখন জন্ম নেওয়া শিশুদের প্রায় ৭০ শতাংশই সময়ের আগেই বা স্বাভাবিক ওজনের নিচে জন্ম নিচ্ছে, যেখানে ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে এই হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। তিনি যোগ করেন, “অপুষ্টির প্রভাব শুধু মায়েদের ওপর নয়, নবজাতকদের জীবনেও ভয়াবহভাবে পড়বে।”
চলতি বছরের আগস্টে গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি সে সময় জানায়, পুরো গাজা উপত্যকার অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ “চরম সংকটময় অবস্থায়” রয়েছে।
১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির কথা থাকলেও বাস্তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। জাতিসংঘের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিদিন দুই হাজার টন ত্রাণ প্রবেশের কথা থাকলেও, ডব্লিউএফপি জানিয়েছে বর্তমানে গড়ে মাত্র ৭৫০ টন খাদ্য গাজায় প্রবেশ করছে। ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন মাত্র দুটি প্রবেশপথ খোলা থাকায় সহায়তা সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি এনজিও পিএআরসি–এর বিদেশি সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক বাহা জাকউত বলেন, “যুদ্ধবিরতি শুরুর দুই সপ্তাহ পরও গাজার অবস্থা অত্যন্ত করুণ।” তাঁর অভিযোগ, বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকলেট ও কোমল পানীয় ঢুকতে দেওয়া হলেও বীজ বা জলপাইয়ের মতো পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “এই সামগ্রীগুলো শিশু, নারী ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম পুষ্টিচাহিদাও পূরণ করতে পারে না।” অল্প কিছু ফল ও সবজি প্রবেশের অনুমতি মিললেও তার দাম আকাশছোঁয়া। উদাহরণস্বরূপ, এক কেজি টমেটোর দাম আগে ছিল এক শেকেল, এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ শেকেল (প্রায় ৪.৫০ ডলার)।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার অক্সফাম, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এক যৌথ খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল নির্বিচারে গাজায় ত্রাণবাহী চালান আটকে দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৫ জন আহত হয়েছেন।