ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে প্রভাবশালী ইহুদিদের চিঠি
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:২৪ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫

গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রভাবশালী ইহুদি ব্যক্তিরা। প্রাক্তন ইসরায়েলি কর্মকর্তা, অস্কারজয়ী, লেখক ও বুদ্ধিজীবীসহ ৪৫০ জনেরও বেশি ইহুদি খোলা চিঠিতে এই দাবি জানিয়েছেন।
চিঠি প্রকাশ করা হয় ইইউ নেতাদের বৈঠকের সময়, যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখার পরিকল্পনা নিয়ে খবর ছড়িয়েছিল।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমরা ভুলে যাইনি, সকল মানবজীবনের সুরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত আইন, সনদ ও সম্মেলনগুলো হলোকস্টের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছিল। ইসরায়েল এই সুরক্ষাগুলো বারবার লঙ্ঘন করেছে।”
চিঠিতে সই করেছেন প্রাক্তন ইসরায়েলি পার্লামেন্টের স্পিকার আভ্রাহাম বার্গ, প্রাক্তন শান্তি আলোচক ড্যানিয়েল লেভি, ব্রিটিশ লেখক মাইকেল রোজেন, কানাডিয়ান লেখক নাওমি ক্লেইন, অস্কারজয়ী পরিচালক জোনাথান গ্লেজার, মার্কিন অভিনেতা ওয়ালেস শন, এমি বিজয়ী ইলানা গ্লেজার, হান্না আইনবাইন্ডার ও পুলিৎজার বিজয়ী বেঞ্জামিন মোজার।
তারা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) এবং আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের রায় অনুসরণ, ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ, গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত এবং শান্তি ও ন্যায়বিচার পক্ষে কথা বলায় 'ইহুদি-বিদ্বেষ' অভিযোগের মিথ্যা দাবি প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “অপূরণীয় দুঃখে আমরা মাথা নত করছি—কারণ প্রমাণ জমা হচ্ছে যে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার আইনি সংজ্ঞা পূরণ করেছে।”
মার্কিন ইহুদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনমত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে চিঠিটি এসেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপে দেখা গেছে, ৬১% মার্কিন ইহুদি মনে করেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করছে, ৩৯% মনে করেন গণহত্যা চলছে। মার্কিন সাধারণ জনগণের মধ্যে ৪৫% একই মত পোষণ করেন।
চিঠিতে আরও সই করেছেন ইসরায়েলি কন্ডাক্টর ইলান ভলকভ, নাট্যকার ভি, আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা এরিক আন্দ্রে, দক্ষিণ আফ্রিকার ঔপন্যাসিক ড্যামন গালগুট, অস্কারজয়ী সাংবাদিক যুবাল আব্রাহাম, টনি বিজয়ী টবি মার্লো এবং দার্শনিক ওমরি বোহম।
তারা লিখেছেন, “ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রদর্শন ইহুদি ধর্মের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা নয়, বরং এর পূর্ণতা। যখন আমাদের ধর্মীয় নেতারা শিখিয়েছিলেন, একটি জীবন ধ্বংস করা মানে সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস করা, তখন তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য ব্যতিক্রম করেননি। আমরা দখলদারিত্ব ও বর্ণবাদের অবসান না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, জনসংখ্যার প্রায় ৯০% অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন ও জেফ মার্কলের তথ্য-অনুসন্ধান অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস এবং জাতিগতভাবে নির্মূলের পদ্ধতিগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণও রয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে। ফিলিস্তিনি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েল ১১ দিনে ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে কমপক্ষে ৮০ ফিলিস্তিনি হত্যা করেছে।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় জানিয়েছে, পশ্চিম তীরে হামলায় এই বছর ৩,২০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে এবং বসতি স্থাপনকারীদের ৭১টি হামলা নথিভুক্ত হয়েছে।