১০ বছর বয়সী শিশু সন্তানকে নিয়ে মরক্কো থেকে সাঁতরে স্পেনে নারী


১০ বছর বয়সী শিশু সন্তানকে নিয়ে মরক্কো থেকে সাঁতরে স্পেনে নারী

ভয়কে জয় করে সাগর পেরিয়ে সন্তানকে নিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছেন এক সাহসী মরক্কো নারী। দশ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে সাঁতরে স্পেনের উত্তর আফ্রিকান ছিটমহল সেউটায় পৌঁছানোর এ ঘটনা এখন মরক্কো ও স্পেনজুড়ে বিস্তর আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে ১২ অক্টোবর, যখন ওই নারী ফনিদেক শহরের উপকূল থেকে সাগরে ঝাঁপ দেন। ঘন্টা ধরে উত্তাল স্রোতের সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্ত তিনি ও তার শিশু সন্তান সেউটার উপকূলে পৌঁছাতে সক্ষম হন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এল ফারো দে সেউটা (El Faro de Ceuta) জানিয়েছে, সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি ভাসমান বোর্ড আঁকড়ে ধরা শিশুটির পাশে রয়েছেন তার মা। দুজনেই ক্লান্ত, অবসন্ন। তাদের শরীরে ছিল শুধুমাত্র ডাইভিং স্যুট ও সাঁতারের ফিন।

তীরে উপস্থিত লোকজন স্তম্ভিত হয়ে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। মা ও সন্তান উপকূলে পৌঁছানোর পর স্পেনের সিভিল গার্ড সদস্যরা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে। উদ্ধার মুহূর্তে তাদের চোখেমুখে ছিল চরম আতঙ্ক ও শারীরিক ক্লান্তির ছাপ।

মরক্কোয় বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকট চরমে। দেশটিতে বেকারত্বের হার ১৩.৩ শতাংশ, তরুণদের মধ্যে এই হার ৩৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপের পথে পা বাড়াচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ‘জেন জি ২১২’ নামে একটি তরুণদের সংগঠনের ডাকে মরক্কোর বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও মর্যাদাসম্পন্ন জীবনের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন শত শত তরুণ।

উদ্ধারের পর মা ও ছেলেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের সেউটার শরণার্থী গ্রহণকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

সেউটা ও মরক্কোর সীমান্ত বরাবর কড়া নিরাপত্তা ও বেড়া বসানোর পর অনেকেই বিকল্প পথ হিসেবে সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও সেউটা ও মরক্কোর মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব খুব বেশি নয়, কিন্তু পথটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। তীব্র স্রোত, ঠান্ডা পানি ও পাথুরে তীর সাঁতারুদের জন্য জীবনঘাতী হয়ে উঠছে।

সামাজিক মাধ্যমে ওই নারী লিখেছেন, "এই পথটা খুব কঠিন। ভালো সাঁতারু না হলে পার হওয়া সম্ভব নয়। আমি ভয়ঙ্কর কষ্ট পেয়েছি, কারণ সমুদ্রের স্রোত টেনে নিয়ে যায় পাথরের দিকে। যারা চেষ্টা করেননি, তারা বুঝবেন না এই অভিজ্ঞতা কতটা কঠিন।"

চলতি বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন মরক্কোর নাগরিক সেউটায় সাঁতরে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গবেষক আলী জুবাইদি বলেন, "এই নারীরা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে নাড়িয়ে দিচ্ছেন। কারণ সেউটায় সাঁতার কেটে পৌঁছানো শারীরিক ও মানসিক সাহসের পরিচায়ক, যা আগে কেবল পুরুষদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হতো। এখন নারীরাও প্রমাণ করছেন, তারাও সমানভাবে সক্ষম।"

নতুন করে শুরু করার আশায় শুধু পুরুষ নয়, নারীরাও এখন জীবন ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন। মরক্কোর তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ঘেরা, আর সেই অন্ধকার থেকেই কেউ কেউ এমন দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যার পরিণতি হয়তো মৃত্যু, হয়তো নতুন জীবনের সন্ধান।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×