শান্তিতে নোবেল জেতার পরই প্রকাশ্যে মারিয়া মাচাদোর ‘অন্ধকার দিক’
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:২৯ এম, ১১ অক্টোবর ২০২৫

চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, নরওয়ের নোবেল কমিটি তার নাম ঘোষণা করে। পুরস্কার ঘোষণার পরপরই মাচাদো এটি উৎসর্গ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কট্টর বিরোধী মাচাদো ইসরায়েল ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুরও প্রকাশ্য সমর্থক। শনিবার, ১১ অক্টোবর, জর্ডানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রোয়া নিউজের একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শান্তিতে নোবেল জয়ের পরই ইসরায়েলের একটি টেলিভিশনকে দেওয়া মাচাদোর এক পুরনো সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়। সেখানে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি এবং আমি ঘোষণা দিচ্ছি, ইসরায়েলের সমর্থনে আমাদের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হবে।”
এছাড়া, ২০১৮ সালে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে একটি চিঠি লেখেন, যেখানে ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপ চালিয়ে মাদুরোর সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানান।
মাচাদো গাজায় ইসরায়েলি হামলারও প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছেন। নোবেল জয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, তার পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উৎসর্গ করা হলো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে মাচাদোর। দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থেকে তিনি বিদেশি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর মার্কো রুবিও মাচাদোর প্রশংসা করে বলেছিলেন, “মারিয়া হলেন স্থিতিস্থাপকতা, দৃঢ়তা এবং দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক।”
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর মাদুরো সরকার মাচাদোকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মুক্তির দাবিতে পোস্ট দেন।
‘গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত মাচাদোকে নিয়ে একটি সমালোচনামূলক কলাম লেখেন কোডপিংকের লাতিন আমেরিকা ক্যাম্পেইন কো-অর্ডিনেটর ও ভেনেজুয়েলান নাগরিক মিচেল এলনার। তিনি লেখেন, “মারিয়ার মতো ডানপন্থিরা যখন নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতে তখন শান্তির আসলে কোনো অর্থ হয় না।”
মাচাদোর অতীত কর্মকাণ্ড তুলে ধরে এলনার জানান, ২০০২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি সহায়তা করেছিলেন, যেখানে স্বল্প সময়ের জন্য একটি নির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করা হয়। তিনি ‘কারামোনা ডিক্রি’তেও স্বাক্ষর করেছিলেন, যার ফলে ভেনেজুয়েলার সংবিধান ও সব সরকারি প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরও জানান, মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি কাজ করে ভেনেজুয়েলায় বিদেশি হস্তক্ষেপকে উৎসাহ দিয়েছেন মাচাদো। এমনকি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ, যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন এবং নিষেধাজ্ঞারও সমর্থন করেন তিনি, যদিও এসব নিষেধাজ্ঞার ভুক্তভোগী হন সাধারণ নাগরিকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়ে নিজেকেই সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করেছিলেন মাচাদো।
ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে মাচাদো বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হলে তিনি ইসরায়েলি দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করবেন। এছাড়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকেও সমর্থন করেন।
বর্তমানে তিনি ভেনেজুয়েলার তেল, পানি ও অবকাঠামো খাত বেসরকারিকরণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে এ ধরনের নীতির ফলাফল অতীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক ছিল।
২০১৪ সালে দেশব্যাপী ‘লা সালিদা’ নামের আন্দোলনের ডাক দেন মাচাদো। যদিও পশ্চিমা গণমাধ্যম এটিকে শান্তিপূর্ণ বলে প্রচার করেছিল, বাস্তবে আন্দোলনটি সহিংস রূপ নিয়েছিল।