পাকিস্তানকে কাছে টানছেন ট্রাম্প, কড়া নজরে ভারত
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:০০ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন গতি পেয়েছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনির হোয়াইট হাউজ সফর করেন এবং ট্রাম্পের প্রতি তাদের প্রশংসাসূচক মন্তব্য এই ঘনিষ্ঠতা স্পষ্ট করে। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানো।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পাকিস্তানের শুল্কহার কমানোর বিনিময়ে জ্বালানি, খনিজ ও কৃষি খাতে মার্কিন বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত হয়। শরিফ এ জন্য ট্রাম্পকে ওভাল অফিসে ধন্যবাদ জানান।
হোয়াইট হাউজ প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা যায়, সেনাপ্রধান মুনির ট্রাম্পকে বিরল মৃত্তিকা খনিজে ভরা একটি বাক্স উপহার দিচ্ছেন। এটি ছিল মুনিরের চলতি বছরের দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র সফর।
যদিও ট্রাম্পের পাকিস্তানে বিশাল তেলের মজুত থাকার দাবি সন্দেহের জন্ম দিয়েছে, তবে জুলাইয়ে চুক্তি ঘোষণার সময় তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন, “ভারত একদিন পাকিস্তানের তেল কিনতে পারে।”
শরিফ ট্রাম্পকে ‘শান্তির মানুষ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, মে মাসে কাশ্মিরে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর হামলার পর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি সহজ করতে ট্রাম্প সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন। যদিও ভারত ট্রাম্পের কোনও ভূমিকা থাকার দাবি অস্বীকার করেছে। মুনির ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের উপযুক্ত বলেও মন্তব্য করেন।
এই সময়েই যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ক্রমেই শীতল হয়ে উঠছে। ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার ঘনিষ্ঠতা এখন অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বজায় রেখেছে, যা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
মার্কিন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের হর্ষ পন্ত বলেন, যদি পাকিস্তান মার্কিন কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে, তাহলে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটতে পারে।
এতে কোয়াড অংশীদারিত্ব ও চীন মোকাবিলায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা প্রভাবিত হতে পারে।
চিত্র আরও জটিল করেছে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি। এতে একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বলে বিবেচিত হবে।
ভারতে নিযুক্ত সাবেক পাকিস্তানি হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়া বলেন, ভারত এখনই অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন নয়। পাকিস্তান তার অবস্থান কাজে লাগিয়ে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক থাকতে চাইছে।
ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মীরা শঙ্কর বলেন, “ট্রাম্প উভয় দেশকেই লেনদেনভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেন এবং পাকিস্তান সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে কাজে লাগাতে শিখেছে।”
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিতাভ মাত্তু বলেন, “ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের প্রতি বারবার ফিরে এসেছে কার্যকরী কারণেই। তবে এখন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের দ্বৈত নীতি সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের প্রতি গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”